সুর, ছন্দ আর সংগীতে এক হলো বিশ্ব
সুর কখনো যেন বাধা মানে না। সুরের কোনো সীমানা নেই। এর সঙ্গে ছন্দময় ভাষার গাঁথুনিতে হয়ে যায় সংগীত। এই সংগীত মানুষের মধ্যে চেতনাবোধ জাগিয়ে তোলে। করে তোলে ঐক্যবদ্ধ। তাই সুর, ছন্দ আর সংগীতের মধ্যে নেই কোনো বিভেদ, নেই কোনো দ্বন্দ্ব। বিশ্বের যেকোনো ভাষার সংগীত হোক না কেন, সেটি মানুষের মনের কথাই বলে, বলে অধিকারের কথা। আর ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতিকে অধিকারসচেতন করে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটিতে বাঙালি জাতি তাদের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বজুড়ে একুশে ফেব্রুয়ারিতে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষার বন্ধনে পুরো বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ। আর এই ভাবনা থেকেই আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় ‘বাজাও বিশ্ববীণা’।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশ্বের ৪১টি দেশের সংগীত ও নৃত্যালেখ্য পরিবেশন করা হয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও পরিকল্পনায় এই সংগীত ও নৃত্যালেখ্যর সঙ্গে এসব দেশের প্রকৃতি, ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। ইয়াসমীন আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে ঢাকা সাংস্কৃতিক দল এবং সৈয়দা সায়লা আহমেদের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে ভঙ্গিমা ডান্স থিয়েটার।
ভাষার ভিন্নতা থাকলেও প্রতিটি দেশের সংগীত ও নৃত্যে ফুটে ওঠে দেশাত্মবোধ চেতনা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এর সঙ্গে তুলে ধরা হয় দেশগুলোর অধিকার ও স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাস। শুরুতেই পরিবেশন করা হয় ভূমধ্যসাগর পাড়ে উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়াকে। ‘আসসালাম, আসসালাম/আসসালামু ওয়ালাইকুম/কাইফা হালুকা/ আহালান ওয়াসসালান’ গানটির সঙ্গে সঙ্গে আলজেরিয়ানদের মরুর নৃত্য, উট ও সার্কাসের দৃশ্য দেখানো হয়। একইভাবে রুশ সংগীতে ফুটে আসে ক্রেমলিন, রেড স্কয়ার। দক্ষিণ এশিয়াসহ ইউরোপ, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও ওশেনিয়া অঞ্চলের প্রতিটি দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য এক–এক মিনিট করে সংগীত ও নৃত্যে তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয় মরক্কো, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, রাশিয়া, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, কম্বোডিয়া, নেপাল, মেক্সিকো, ভারত, মিয়ানমার, কিউবা, মোজাম্বিক, সিংগাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ভানুয়াতু, দক্ষিণ কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, পাকিস্তান, ইউক্রেইন, ইতালি, জাপান, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, পাপুয়া নিউগিনি, মালদ্বীপ, অস্ট্রেলিয়া, মিসর, ফিলিপাইন, ফ্রান্স, পূর্ব তিমুর, চায়না, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, ফিজি, জার্মানি, আমেরিকা ও বাংলাদেশের নাচ এবং দেশগুলোর ভাষায় গান।
৪০টি দেশের পর সবশেষে ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে/ পাল উড়াইয়া দে’, এর মাধ্যমে জানানো হয় বাংলাদেশের নদী-মানুষের কথা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘ভাষার ইতিহাস দুই হাজার বছরেরও বেশি। বিশ্বে সাড়ে ছয় হাজার ভাষার মধ্যে প্রতিবছর ২০টির বেশি ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই আজকের এই আয়োজন কোনো অনুষ্ঠান নয়, আন্দোলন।’