উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বাম গণতান্ত্রিক জোট নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এই জোটের কোনো কোনো নেতা বলছেন, তাঁদের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই সরকার উপজেলা নির্বাচন ও ডিএনসিসির উপনির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসিতে ও মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে ধাপে ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ বাদে অন্য দলগুলোর নির্বাচন নিয়ে তেমন তোড় জোর দেখা যাচ্ছে না।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আটটি বাম দল দেড়শ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন ২৯৯ আসনে প্রার্থী দেয়।
বিএনপি এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় বাম গণতান্ত্রিক জোট নির্বাচনকে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। তারাও কারচুপি, জালিয়াতির অভিযোগ করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। উপজেলা বা ডিএনসিসি নিয়ে তারা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আগামী ২৭ জানুয়ারি রোববার জোটের শরিকেরা বসে সিদ্ধান্ত নেবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক মো. শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন ডাকসু নিয়ে ভাবছি। সেখানে অংশগ্রহণ করব। উপজেলা বা উত্তর সিটির উপনির্বাচনের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। ২৭ জানুয়ারি বৈঠক হবে। সেখানে নির্বাচন, আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করা হবে।’
বাম জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ন্যূনতম কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা এখন নেই। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেভাবে সরকারি দল বা জোটের অনুগত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে সেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সামান্যতম অবকাশ দেখছি না। আমাদের দল থেকে ঢাকা উত্তরের উপনির্বাচনে অংশ নেব না। জোটে আমরা আলোচনা করব। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।’
আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের শরিক দল বাদে সরকার বিরোধী অন্য কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নিলে প্রতিযোগিতাবিহীন নির্বাচন হয়ে যাবে কিনা প্রশ্নে সাইফুল হক বলেন, ‘সরকার তো সেটাই চাইছে। ৩০ ডিসেম্বরের ঘটনায় এ পর্যন্ত তাদের যে অপরাধ এবং ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে তারা যে অপরাধ করেছে। তার প্রায় এক মাস হয়ে গেল। সরকারের দিক থেকে এখন পর্যন্ত আমরা আত্মসমালোচনাও দেখিনি।’
সরকার এখনো কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করেনি জানিয়ে বাম জোটের এই অন্যতম নেতা বলেন, সরকার আলোচনার মাধ্যমে এই সংসদ বাতিল করে নতুন নির্বাচন করে বা মধ্যবর্তী নির্বাচন দিলে রাজনৈতিক দলগুলো আস্থা পেত। বেপরোয়াভাবে বাকি জায়গাগুলো দখল করার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ছাড়া বলেন, ‘এ অবস্থায় আমার ধারণা যে আমাদের পক্ষে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ খুবই কম। তবে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
প্রায় সব আসনে প্রার্থী দেওয়া ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে। তারাও নানান অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। দলটির রাজনৈতিক উপদেষ্টা আশরাফ আলী আকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার তার ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। প্রধানমন্ত্রী ভালো নির্বাচন করবেন বলে তাঁর ওপর আস্থা রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি আস্থা নষ্ট করেছেন। এ জন্য এ সরকারের অধীনে আমরা আর কোনো নির্বাচনে যাব না। ঘৃণা ও ধিক্কার বহিঃপ্রকাশ থেকে আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না।’
খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানো হবে বলে জানিয়ে আশরাফ বলেন, তবে দলের ভেতরে নির্বাচনের না যাওয়ার ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকার বিরোধী কোনো জোট হয়ে অংশ নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, সেটা অবস্থা বুঝে দল চিন্তা করবে।