সরব আ.লীগ, নীরব বিএনপি

>

• এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
• ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল হতে পারে
• মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে উপজেলা নির্বাচন হতে পারে
• পাঁচ ধাপে উপজেলা নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন
• মে মাসের মধ্যে বেশির ভাগ নির্বাচন শেষ করতে চায় ইসি
• এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করবে না বিএনপি
• বিএনপি না এলে আ.লীগের প্রতিপক্ষ হতে পারে আ.লীগই

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না–কাটতে শুরু হচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তোড়জোড়। তবে নির্বাচন ঘিরে আগ্রহ এবং প্রার্থী হওয়ার দৌড়ঝাঁপ চলছে শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শিবিরে। বিপরীতে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা চুপচাপ। তাঁরা তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রের দিকে।

এদিকে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে দলটি এ কথা​ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি। শেষ পর্যন্ত বিএনপির এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে একপেশে হয়ে যাবে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কৌশল কী হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে না গেলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার হার বেড়ে যেতে পারে বা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবেন আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিক দলের নেতারা। এমনটা হলে ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মতো এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন দলটির নেতারা।

দলীয় প্রতীকে ২০১৬ সালে ছয় ধাপে ৪ হাজার ১০৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়েছিল। বিএনপি সে নির্বাচনে অংশ নিলেও বেশির ভাগ সংঘাত হয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিজেদের মধ্যে। সে নির্বাচন ঘিরে চার মাসে ১১৬ জন নিহত হয়েছিলেন, যার মধ্যে ৭১ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থক। এই ৭১ জনের মধ্যে ৬০ জনই নিহত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২০৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাঁচ ধাপে উপজেলা নির্বাচন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মে মাসের মধ্যে বেশির ভাগ নির্বাচন শেষ করতে চায় ইসি। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।

এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, বিএনপি না গেলে নির্বাচন হবে মূলত মহাজোটের শরিকদের মধ্যে। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের শরিকদের সেভাবে অবস্থান নেই। বিএনপি নির্বাচনে না থাকলে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ আরও বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন না পেলে একটি বড় অংশ স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকতে চাইবে।

সাধারণত বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে বিএনপি নির্বাচনে না থাকলে নতুন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ কী করবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্য অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়টি উন্মুক্তও করে দেওয়া হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে উপজেলা নির্বাচন করবে না। মহাজোটের শরিকেরা নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করবে।

আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল দেখে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, উপজেলায় দলের মনোনয়ন পেলেই চেয়ারম্যান পদে জয় অনেকটা নিশ্চিত। আর বিএনপির অনেকে মনে করছেন, এই ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও খুব একটা লাভ নেই। বরং এতে হামলা-মামলা আরও বাড়বে। তাই তাঁরা চুপচাপ আছেন।

সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ কলিম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, এটা কেউ বিশ্বাস করে না। তাঁরা মনে করেন, সামনের নির্বাচনগুলোও একইভাবে হবে। তিনি বলেন, গায়েবি মামলায় অসংখ্য নেতা-কর্মী এখনো কারাগারে, অজ্ঞাত আসামি রেখে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় তাঁর এলাকার নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে।

তবে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় নেতা-কর্মীরা দিশেহারা। তারপরও কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেভাবে কাজ করা হবে।

পাবনা, সুনামগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, শেরপুরসহ দেশের প্রায় সব জায়গায় মাঠে সরব আওয়ামী লীগের নেতারা। সব উপজেলায় একাধিক নেতা মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। অনেকে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার-ব্যানার টানিয়েছেন, গণসংযোগ করছেন।

জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশাল বিজয়ের কারণে দলীয় নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত। এ কারণে এবার উপজেলা নির্বাচনেও মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা অনেকটাই বেশি। দলের অনেকেই প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে হয়তো আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নের বাইরে নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেবে। তাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা যেমন আছে, আবার ব্যাপক সংঘাতের আশঙ্কাও থাকবে। তবে এটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ইতিবাচক হবে না। সংসদের বাইরে যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, তাদের আর কার্যকারিতা থাকবে না।

(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট জেলা প্রতিনিধিরা)

আরও পড়ুন: