দীঘিনালায় জেএসএস কর্মীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস-এমএন লারমা) কর্মীকে অপহরণের পর পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিরোধের জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ বলা হয়।
নিহত ওই কর্মীর নাম কিরণ চাকমা (৪২) ওরফে মনাইয়া। তিনি দীঘিনালা উপজেলার এক নম্বর মেরুং ইউনিয়ন শাখা কমিটির জেএসএসের সদস্য। তিনি অনিন্দ্য কারবারি পাড়ার জয়ন্ত কারবারির ছেলে।
দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম চন্দ্র দেব প্রথম আলোকে বলেন, জেএসএস (এমএন লারমা) পক্ষের এক সদস্যকে অপহরণের বিষয়টি শুনেছি। হত্যার বিষয়টি শুনে আজ শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের একটি যৌথ দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। লাশের সন্ধান পেলে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পার্বত্য আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস (এমএন লারমা) স্থানীয় আরেক সংগঠন ইউপিডিএফকে (প্রসিত খীসা) দায়ী করছে। যদিও ইউপিডিএফ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ নিয়ে পাহাড়ে সংঘাতে গত এক বছরে কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত হলো।
জেএসএস (এমএন লারমা) পক্ষ থেকে অভিযোগে বলা হয়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় উপজেলার অনিন্দ্য কারবারি পাড়ার বাড়ি থেকে ইউপিডিএফয়ের লোকজন কিরণ চাকমাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের পর তাঁকে দুর্গম পনছড়ি এলাকায় নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। শুক্রবার সকালে অনিন্দ্য কারবারি পাড়ার কয়েকজন মুরুব্বি কিরণের খবর নিতে ইউপিডিএফ নেতাদের কাছে গেলে হত্যার করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
জেএসএস (এমএন লারমা) পক্ষের দীঘিনালা উপজেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি লোচন দেওয়ান অভিযোগে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংগঠনের সিদ্ধান্ত মতে নৌকার পক্ষে কাজ করায় কিরণ চাকমার ওপর ইউপিডিএফ ক্ষুব্ধ ছিল। সে জন্য বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে ইউপিডিএফয়ের লোকজন অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সে আমাদের সংগঠনের মেরুং ইউনিয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন।’
ইউপিডিএফ (প্রসীত খীসা) পক্ষের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেএসএস (এমএন লারমা) পক্ষের অভিযোগ মনগড়া ও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কাউকে অপহরণ করে হত্যার ঘটনা আমার জানা নেই। নির্বাচনে তারা (এমএন লারমা) একটি পক্ষের হয়ে কাজ করতে সাধারণ মানুষকে বাধ্য করেছে। সাধারণ মানুষ তাদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। এ ঘটনাও তাঁদের কোনো অভ্যন্তরীণ বিরোধে ঘটে থাকতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করলে রহস্য বেড়িয়ে আসবে।’
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) । ওই চুক্তির বিরোধিতা করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) জন্ম হয়। ২০১০ সালের ১০ এপ্রিল জেএসএস থেকে একটি পক্ষ বের হয়ে জেএসএস (এমএন লারমা) নামে একটি সংগঠন তৈরি করে। ২০১৭ সালে ১৫ নভেম্বর ইউপিডিএফ থেকে একটি পক্ষ বের হয়ে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করে। সংগঠনগুলোর সংঘাতে পাহাড়ে এ পর্যন্ত কয়ে শ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ গত ৪ জানুয়ারি রাঙামাটির বাঘাইছড়ির বাবুপাড়ায় ব্রাশ ফায়ারে বসু চাকমা নামে জেএসএসের (এমএন লারমা) কর্মী নিহত হন।