ঢাকা-১: লড়াই হবে দোহার বনাম নবাবগঞ্জের!
শুভ্রনীল আকাশের নিচে বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে সরিষার খেত। মাঠে মাঠে হলুদ রঙা সরিষা ফুলের হাসি। সাদা বক দল বেঁধে ধানখেতে ব্যস্ত মাছ শিকারে। ধানের খেত প্রস্তুত করে চলেছেন কৃষকের দল। রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জের সড়ক ধরে নবাবগঞ্জের দিকে এগোলে এমন নৈসর্গিক দৃশ্যের ছবি চোখের সামনে ভাসবে এখন।
লাল রঙের দেয়ালে খোদাই করা মহাকবি কায়কোবাদের ছবি। নবাবগঞ্জের কায়কোবাদ গেট দিয়ে ঢোকার পর প্রথম দেখা গেল, সালমা ইসলাম আর সালমান এফ রহমানের নির্বাচনী পোস্টার। রাস্তার দুই ধারে কেবল এই দুজনের পোস্টারই বলে দেয়, লড়াই হবে সালমা আর সালমানের মধ্যেই। কে হবেন ঢাকা-১ (নবাবগঞ্জ-দোহার) আসনের সাংসদ?
জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সাংসদ হওয়া সালমা ইসলাম এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী। যমুনা গ্রুপের পরিচালক ও দৈনিক যুগান্তরের প্রকাশক এই নারী প্রার্থীর প্রতীক মোটরগাড়ি। আর বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালমান এফ রহমানের প্রতীক নৌকা। বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবু আশফাকের মনোনয়ন উচ্চ আদালতে বাতিল হয়ে যাওয়ায় ভোটারদের আলোচনায় এখন কেবল সালমা আর সালমান।
তবে এর বাইরে অন্য দলগুলোর প্রার্থীও রয়েছেন। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কালাম হোসেন ও সিপিবির আবিদ হোসেনের কিছু পোস্টারও চোখে পড়েছে।
ভোটারের মন
শুক্রবার বিকেলে দোহারের চা–দোকানি বাদশা মিয়া চুপচাপ বসেছিলেন।
পরিচয় দিয়ে তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, ‘ভাই, এখানে ভোটের কী খবর?’
জবাবে বাদশা মিয়া বলেন, ‘ভোটের আর কী খবর হবে, ভাই। এখানে বিএনপির প্রার্থী নেই। তাই লড়াই হবে গাড়ি আর নৌকায়।’
বাদশা মিয়ার সঙ্গে যখন এই আলাপ চলছিল, তখন মোটরগাড়ির আদলে সাজানো একটি ভ্যান চলে যায় সালমার নির্বাচনী গান বাজাতে বাজাতে।
চা–দোকানে বসে থাকা মালেক তখন বাদশার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, দোহারের ভোটার দোহারের ছেলে সালমানকে জেতাতে চাইবেন।
বাদশা তখন বলেন, দোহারের লোক চাইলে তো আর হবে না, চাচা। নবাবগঞ্জের ভোটাররাও চাইবেন সালমা জিতুক। লড়াই হবে লড়াই, তুমুল এক লড়াই।
সালমানের বাড়ি দোহারের বেথুয়ায় আর সালমার বাড়ি নবাবগঞ্জের কামারখোলা গ্রামে। দোহারের তুলনায় নবাবগঞ্জের ভোটারের সংখ্যা বেশি। দোহার-নবাবগঞ্জের প্রায় পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য বিদেশে আছেন। যে পরিবারের সদস্য বিদেশে আছেন, সেই পরিবার যথেষ্ট সচ্ছল।
মিনি কক্সবাজার খ্যাত দোহারের মৈনটঘাটের দিকে সালমানের পোস্টার সালমার থেকে বেশি চোখে পড়ে। নবাবগঞ্জ-দোহারের বাজারে বাজারে সালমানের নৌকার নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্র দেখা গেল। অবশ্য সালমার নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্রও আছে বাজারগুলোতে। সমান তালে চলছে নির্বাচনী প্রচার আর গান।
দোহার ঘুরে এলাম নবাবগঞ্জে। মোসলেম উদ্দিনের চায়ের দোকানে বসে কয়েকজন ভোটার নির্বাচনী আলাপে ব্যস্ত।
একজন বলছিলেন, বিএনপির ভোট যার পকেটে বেশি পড়বে, তাঁর জেতার সম্ভাবনা বেশি।
চা–দোকানি মোসলেম বললেন, কে জেতে ভাই, আগে থেকে কেউ বলতে পারবে না?
ভোটের দিন যতই কাছে আসছে, ভোটের উত্তাপ ততই বাড়ছে দোহার-নবাবগঞ্জে। ভোটারের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সালমা আর সালমান। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। সারা দিন ঘুরে সন্ধ্যার পর নবাবগঞ্জ হয়ে যখন ঢাকার পথে রওনা হলাম, তখন চা–দোকানি বাদশা মিয়ার কথাটা মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। বাদশা মিয়া বলেছিলেন, ‘যে যা–ই বলুক ভাই, এখানে যুদ্ধ হবে দোহার বনাম নবাবগঞ্জের মধ্যে।’ এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪০ হাজার ৪০৭। ভোটারের মন জয় করে কে হবেন তাঁদের প্রতিনিধি তা জানার জন্য আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে।