এক সপ্তাহ 'অবরুদ্ধ' থেকে ঢাকায় গেলেন আজিম

আনোয়ার উল আজিম
আনোয়ার উল আজিম

ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী এম আনোয়ার উল আজিম প্রচারণা চালাতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। এ অবস্থায় এক সপ্তাহ ঘরে ‘অবরুদ্ধ’ থেকে গতকাল শনিবার তিনি ঢাকায় চলে গেছেন।

আনোয়ার উল আজিম বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর ১২ ডিসেম্বর প্রচারণা ও গণসংযোগ করতে তিনি গ্রামের বাড়িতে আসেন। ১৪ ডিসেম্বর তিনি মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামে দলের এক নেতার জানাজায় অংশ নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় বের হচ্ছিলেন। তখন সেখানে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা তাঁকে রাস্তায় বের হতে নিষেধ করেন। এরপর থেকে বাড়িতে তিনি আক্ষরিক অর্থে ‘অবরুদ্ধ’ দিন কাটাচ্ছিলেন। গতকাল দুপুরে বিরক্ত হয়ে তিনি ঢাকায় চলে যান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও সহনশীল হলে তিনি ফিরবেন।

এদিকে আনোয়ার উল আজিমের নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরাও মাঠে নেই। তাঁরা কেউ প্রবাসে, কেউ আত্মগোপনে, কেউ কারাগারে আছেন। দুই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিএনপির পদধারী নেতা ও কর্মীদের বাড়িঘরে ভাঙচুর, আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাঁর নির্বাচন পরিচালনাকারী

নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগই গা ঢাকা দিয়েছেন। এ অবস্থায় দলের নেতাদের পাশে পাচ্ছেন না কর্মীরা। এ আসনে একচেটিয়াভাবে আওয়ামী লীগের প্রচারণা চলছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার এসেই শিল্পপতি মো. তাজুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। সে নির্বাচনে তিনি সামান্য ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও শিল্প উদ্যোক্তা বিএনপির প্রার্থী এম আনোয়ার উল আজিম প্রথমবার নির্বাচনে এসে ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে তাজুল ইসলামকে পরাজিত করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ৪৫৮ ভোটের ব্যবধানে তাজুল ইসলাম জয়ী হন। এবার আবার তাঁরা নির্বাচনে মুখোমুখি। এবারও তাঁদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু দুই নেতার মধ্যে সাংগঠনিক ব্যবধান অনেক বেশি। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে পুরো কমিটি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। অপর দিকে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুব নড়বড়ে। নেতারাও গ্রেপ্তারের ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।

বিএনপির তিনজন নেতা-কর্মী বলেন, ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর রাতে এম আনোয়ার উল আজিমের অনুসারী লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজ ‘গুম’ হন। এরপর দীর্ঘ সময় বিএনপি লাকসামে দাঁড়াতে পারেনি। ২০১৪ সালে মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি জয়লাভ করে। পরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। অপর ভাইস চেয়ারম্যান দলীয়ভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াস পাটোয়ারী কিছুদিন কারাভোগ করার পর দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় হন। ২০১৭ সালে আনোয়ার উল আজিমের অনুসারীদের বাদ দিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম দুই উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সব কমিটি নিজের অনুসারীদের দিয়ে অনুমোদন করে নেন। এ নিয়ে আনোয়ার উল আজিমের অনুসারীদের সঙ্গে আবুল কালামের লোকজনের সংঘর্ষ হয়। এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আত্মগোপনে ও দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি যুক্তরাষ্ট্রে ও সাধারণ সম্পাদক কুমিল্লা শহরে থাকেন। আনোয়ার উল আজিমের অনুসারী লাকসাম পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলামকেও ডিবি পুলিশ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে।

আনোয়ার উল আজিম বলেন, ‘হেলমেট ও মাস্ক বাহিনী কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। আমিও অবরুদ্ধের মতো ছিলাম। আওয়ামী লীগ ভোট চায় না। প্রশাসন ১০০ শতাংশ উদাসীন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কাল (আজ রোববার) ফিরে আসার চেষ্টা করব।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। উনি (আজিম) এলাকায় আছেন কি না জানি না।’