কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়াও নির্বাচনী প্রচারণায় সরগরম। ২৭ বর্গকিলোমিটারের এই উপজেলা জামায়াত-বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিত। কিন্তু এবার প্রচারণায় নৌকার প্রাধান্য বেশি। সড়কের ওপর, দোকানপাট, অলিগলি এবং দ্বীপে উঠা–নামার জেটি-চারদিকে নৌকার প্রতীক। মাঝেমধ্যে চোখে পড়েছে আপেল প্রতীকের পোস্টার।
গত শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উপজেলার আলীআকবরডেইল, কৈয়ারবিল, ধুরুং, উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং ও লেমশিখালী ইউনিয়নের অন্তত ২৫টি গ্রাম ঘুরে ভোটের প্রচারণা চোখে পড়েছে।
মহেশখালীর ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন এবং কুতুবদিয়ার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-২ আসনে হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৬ হাজার ১৭৭। এর মধ্যে মহেশখালীতে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৫৩ ও কুতুবদিয়ায় ৮৪ হাজার ৫২৪ ভোট।
এই আসনে প্রার্থী ১০ জন। এর মধ্যে আলোচনায় তিনজন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের আশেক উল্লাহ রফিক (নৌকা), ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জামায়াতের এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ (আপেল) ও বিএনপির আলমগীর মো. মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ (ধানের শীষ)।
প্রার্থীদের মধ্যে হামিদুর রহমান আযাদের বাড়ি কুতুবদিয়ায়। অপর প্রার্থীদের বাড়ি মহেশখালীতে। মহেশখালীতে সকল প্রার্থীর প্রচারণা চলছে। কিন্তু কুতুবদিয়ার প্রচারণা নৌকা আর আপেল প্রতীকের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
গানে গানে নৌকার প্রচারণা
উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ দিকে আলীআকবরবলীপাড়া পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটারের আজম সড়কটি (দ্বীপের প্রধান সড়ক) প্রচারণায় জমজমাট। খোলা জিপ, অটোরিকশা-ভ্যান গাড়ি ও ভটভটিতে চড়ে নৌকার প্রচারণা চালাচ্ছেন কলেজপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীসহ এলাকার মানুষ। সড়কে ভ্যান গাড়িতে আস্ত নৌকা সাজিয়ে সামনে মাইক বাজিয়ে চালানো হচ্ছে গানে গানে নির্বাচনী প্রচারণা। সড়কের ওপরে পোস্টারের পাশাপাশি টাঙিয়ে রাখা হয়েছে নৌকা আর নৌকা। অলিগলিতে শিশু-কিশোরেরা নৌকা ও পোস্টার নিয়ে করছে আনন্দ মিছিল। কিন্তু আপেল প্রতীকের প্রচারণা তেমন নেই। কয়েকটি স্থানে ছোট ছোট কয়েকটি মিছিল দেখা গেছে।
দুপুরে আলীআকবরডেইল ইউনিয়নের শান্তিবাজারে নৌকার সমর্থনে পথসভা হচ্ছিল। প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক ভোটারদের উদ্দেশে বললেন, এই দ্বীপে গত পাঁচ বছরে ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। বেড়িবাঁধ ও সড়কের সংস্কার হয়েছে। এখন সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সন্দ্বীপের মতো কুতুবদিয়াতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। তখন কুতুবদিয়ার চেহারা পাল্টে যাবে। এ জন্য নৌকায় ভোট চাই।
কৈয়ারবিল গ্রামের কৃষক জলিল আহমদ বলেন, ‘আগে সাগরে মাছ ধরা যেত না, সাত-আটটি জলদস্যু বাহিনী লুটপাট চালাত। এলাকায় চুরি-ডাকাতি, খুন–খারাবি লেগে থাকত। এখন কিছুই নেই। পুরো দ্বীপ শান্ত। নির্বাচনটাও আমরা শান্তিপূর্ণ চাই।’
উধাও বিএনপি-জামায়াত
অন্যদিকে আপেল প্রতীকের জন্য গণসংযোগ করছেন ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর স্ত্রী জেবুন্নিছা চৌধুরী ও তাঁর মেয়েরা। তিনি সরকারের নানা সমালোচনা করে ভোটারদের আপেল প্রতীকে ভোট চাইছেন। কারাগারে বন্দী স্বামীর জন্য দোয়া চাইছেন। তিনি গতকাল দিনভর উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে গণসংযোগ করেন।
আকবরবলীপাড়ার জেলে আবদুল মতলব (৫৫) বলেন, দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নটি কয়েক যুগ ধরে জামায়াত-বিএনপির ঘাঁটি ছিল। এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার চৌধুরীও জামায়াতের নেতা। ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী হামিদুর রহমানের বাড়িও পার্শ্ববর্তী ধুরুং বাজারে। এখানে আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিল হাতেগোনা। অথচ এখন নৌকার জোয়ার। কারণ বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও নিরাপত্তা। বড়ঘোপ বাজারের লবণচাষি আবদুল মতিন বলেন, শান্ত পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চললেও বিএনপি ও জামায়াতের কোনো নেতা এলাকায় নেই।
ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর স্ত্রী জেবুন্নিছা চৌধুরী অভিযোগ করেন, ভয়ের মধ্যে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাঁর নেতা-কর্মীদের পুলিশ এলাকায় থাকতে দিচ্ছেন না। প্রচারণা চালাতে গিয়ে তিনি নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি জালাল আহমদ বলেন, পুলিশের কারণে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো সম্ভব হচ্ছে না। গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকে এলাকা ছাড়া।
অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে কুতুবদিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ দিদারুল ফেরদৌস বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে কাউকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। শান্তিপূর্ণ অবস্থায় দুই প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন।