'আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর' কয়েকটি জোট তৈরি: ফখরুল
হাইকোর্টের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যে প্রার্থীকে বৈধ বলবে, সেই প্রার্থীকে অবৈধ বলার এখতিয়ার হাইকোর্টের আছে কি?
ঢাকার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আজ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি করেন। তিনি বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি যে, আগের রাতেই ব্যালট বাক্স বোঝাই করে রাখা হবে। এটাই পরিকল্পনা। আমরা শুনতে পাচ্ছি, এগুলো করার জন্য ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর’ কয়েকটি জোট তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ বিশেষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ফখরুল ইসলাম বলেন, বিচার বিভাগ ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ বিএনপির প্রার্থীদের বাতিল করছেন। হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন, এই আদেশটা এখন আমরা কী বলব? কী বলব আমরা সেটাকে? এটাকে কি আইনসম্মত বলব? নাকি বেআইনি বলব? নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলব? তিনি বলেন, একই আদালতে একই কারণে একজনকে বৈধ আর আরেকজনকে অবৈধ বলা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, মার্কা নিয়ে প্রার্থী চলে গেছেন, এরপর ট্রাইব্যুনালে যেতে পারবেন নির্বাচনের পরে, এর আগে নয়। বিএনপির ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। শুধু হস্তক্ষেপ নয়, আমার দলের মনোনয়ন আমি কাকে দেব, সেটাও হাইকোর্ট থেকে বলে দেওয়া হয়েছে। তাহলে আমি কী করে বলব, হাইকোর্টে থেকে আমি সুবিচার ও ন্যায়বিচার পাচ্ছি? আমি কী করে বলব, হাইকোর্ট তাঁর আইনের প্রয়োগ করছেন? তাঁর দাবি, যেসব আসনে বিএনপির প্রার্থীদের অবৈধ ও ‘বেআইনিভাবে’ শূন্য ঘোষণা এবং বাতিল করা হয়েছে, সেই আসনগুলোতে আমাদের প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। অথবা সেই আসনগুলোতে নির্বাচন স্থগিত রাখা হোক।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আমরা বলেছি, যেসব আসনে বিএনপির প্রার্থীদের অবৈধ ও ‘বেআইনিভাবে’ শূন্য ঘোষণা এবং বাতিল করা হয়েছে, সেই আসনগুলোতে আমাদের প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। অথবা সেই আসনগুলোতে নির্বাচন স্থগিত রাখা হোক, পরে তফসিল ঘোষণা করে আবার নির্বাচন দেওয়া হোক।
ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন এবং বিচার বিভাগ আজকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য এক জোট হয়েছে। এটা আমাদের কাছে শুধু বিস্ময়কর নয়, অত্যন্ত আতঙ্কের। আমরা এ কথাগুলো অত্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে বলছি। আমরা আশা করেছিলাম, তফসিল ঘোষণার পর বিরোধী দলগুলো তাদের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচারণায় নামতে পারবে, মামলা স্থগিত থাকবে। কিন্তু এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে কোনো মতেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের আর সাত দিন বাকি। এই ছয় থেকে সাত দিনের মধ্যে আমরা আশা করি, এখনো আশা করছি যে নির্বাচন কমিশন ও সরকার শেষ মুহূর্তে তার সম্মতি ফিরে পাবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনী সবাই দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যবোধ নিয়ে তাঁদের দায়িত্ব পালন করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
বিএনপি-জামায়াত ভুয়া ব্যালট পেপার ছাপাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ভুয়া ব্যালট পেপার তাহলে আপনারা ছাপানো শুরু করে দিয়েছেন? আমরা শুনতে পাচ্ছি যে, আগের রাতেই ব্যালট বাক্স বোঝাই করে রাখা হবে। এটাই পরিকল্পনা। আমরা শুনতে পাচ্ছি, এগুলো করার জন্য ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর’ কয়েকটি জোট তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ বিশেষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে এ কথা কী করে বলতে পারেন? এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। আগে বলেছেন, ভুয়া ব্যালট পেপার ছাপানোর কথা। প্রধানমন্ত্রী গুজব ছড়াচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অনৈতিক পরামর্শ দেওয়া অপরাধ, তাহলে ইসির উচিত তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। আমি দাবি করব, ইসি এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
বিএনপির মহাসচিব ফখরুল বলেন, আমরা কার সঙ্গে লড়াই করছি? সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপির ‘প্রতিপক্ষ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ১৫ জন ধানের শীষের প্রার্থী এখন কারাগারে রয়েছেন। তিনি বলেন, এখন দেশে কোনো ক্রাইম নেই। বিএনপির নির্বাচনে নামাটাই হচ্ছে এখন সবচেয়ে বড় ক্রাইম। একদিকে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস’, অন্যদিকে রাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাস’। এই দুই সন্ত্রাসে তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। দেশে এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান, শাহ মোয়জ্জেম হোসেন, এম এ কাইয়ুম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।