যশোরে প্রচারে সরব আ. লীগ, বাধার অভিযোগ বিএনপির
>• যশোরের ছয়টি আসনের সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা
• জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরাও মাঠে নেমেছেন
• আওয়ামী লীগ, ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীসহ ৩৭ জন প্রার্থী লড়ছেন
• সবাই কমবেশি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই যশোরের ছয়টি আসনের সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণসংযোগ, সভা–সমাবেশে সরব তাঁরা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরাও মাঠে নেমেছেন। যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। তবে তাঁদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের হামলা, গ্রেপ্তার, ভাঙচুর আর হুমকিতে তাঁরা বাধার মুখে পড়ছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগ, ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীসহ ৩৭ জন প্রার্থী লড়ছেন। সবাই কমবেশি প্রচার–প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে একটি আসনে ঐক্যফ্রন্টের আত্মগোপনে থাকা প্রার্থীর পক্ষে নেতা-কর্মীদের তৎপরতা নেই।
যশোর-১ (শার্শা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন। প্রতিদিনই তিনি গণসংযোগ করছেন। চলছে পথসভা, জনসভা, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপির মফিকুল হাসান (তৃপ্তি) অভিযোগ করেন, তাঁর প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে, মাইক ভাঙচুর, কর্মীদের মারপিট করা হচ্ছে।
শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পথসভা, জনসভা, মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করছি। বিএনপির অভিযোগ অমূলক। তাঁদের কোনো রকম বাধা দেওয়া হচ্ছে না।’
এই আসনের অন্য প্রার্থী ইসলামী আন্দোলনের বক্তিয়ার রহমান এবং জাকের পার্টির সাজেদুর রহমানও প্রচারণা চালাচ্ছেন।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে নতুন মুখ আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) মো. নাসির উদ্দিন। তিনি চষে বেড়াচ্ছেন গোটা এলাকা। সঙ্গে থাকছেন দলের সব পর্যায়ের নেতা–কর্মী। নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছি। প্রতিদিন বেশ কয়েকটি পথসভা ও জনসভায় যোগ দিচ্ছি। সর্বত্রই অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি।’
এই আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও জেলা নায়েবে আমির আবু সাইদ মুহাম্মাদ শাহাদৎ হুসাইন। চোখে পড়ার মতো নির্বাচনী প্রচারণা নেই। দুই উপজেলার কয়েকটি জায়গায় কিছু পোস্টার রয়েছে। কিছু এলাকায় চলছে মাইকিং।
শাহাদৎ হুসাইন অভিযোগ করেন, পোস্টার টাঙাতে দেওয়া হচ্ছে না, টাঙালে ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। মাইক ভাঙচুর করা হচ্ছে। কর্মীদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এত কিছুর পরও তিনি ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন।
এই আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির বি এম সেলিম রেজা, বাসদের মো. আলাউদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের মো. আসাদুজ্জামান, গণফোরামের এম আসাদুজ্জামান এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) ফিরোজ শাহ্। তাঁরাও সক্রিয় প্রচারণায়।
যশোর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদ এবং বিএনপির প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলামের প্রচারণাও জমজমাট। তাঁরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন। প্রতিদিন বক্তৃতা করছেন একাধিক পথসভা-জনসভায়।
কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছি। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’
মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাওয়ার দাবি করে অনিন্দ্য ইসলাম অভিযোগ করেন, প্রচুর প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হচ্ছে। তাঁর নির্বাচনী সভায় বোমা হামলা করা হয়েছে। কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
তবে কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, বিএনপির অভিযোগ নতুন নয়, পুরোনো। তাদের কোনো রকম বাধা দেওয়া হচ্ছে না, বরং তারা নাশকতা করছে।
এই আসনে জাপার জাহাঙ্গীর আলম, জাকের পার্টির মনিরুজ্জামান মনির, জেএসডির সৈয়দ বিপ্লব আজাদ এবং বিকল্পধারার মো. মারুফ হাসানও আছেন প্রচারণায়।
যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া উপজেলা ও সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রণজিত কুমার রায় ও বিএনপির প্রার্থী টি এস আইয়ুব জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে টি এস আইয়ুব অভিযোগ করেন, তাঁর ১১টি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত তাঁর ৩৮ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাইক ভাঙচুর করা হচ্ছে, রাতে পোস্টার পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রণজিত কুমার রায়ের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন বিশ্বাস বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ ঠিক নয়। কোনো পোস্টার পোড়ানো এবং নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর আমি শুনিনি।’
এই আসনে জাপার প্রার্থী জহুরুল হকও গণসংযোগ করছেন। ইসলামী আন্দোলনের নাজমুল হুদা, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির লে. কর্নেল (অব.) এম শাব্বির আহমেদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং জাকের পার্টির লিটন মোল্লাও ভোট টানতে মাঠে ঘুরছেন।
যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ স্বপন ভট্টাচার্য প্রতিদিন গণসংযোগ করছেন। জনসভা-পথসভা করছেন। টাঙানো রয়েছে তাঁর পোস্টার।
এই আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের সভাপতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস বর্তমানে আত্মগোপনে। বিএনপি–জামায়াতের নেতা-কর্মীরাও তাঁর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় নামছেন না। তাঁর ছেলে ও জমিয়তে উলামায়ের সহকারী মহাসচিব মুহাম্মদ রশিদ আহমেদ বলেন, ‘শঙ্কা থেকে আমরা প্রচার-প্রচারণায় যাচ্ছি না। পোস্টার টাঙানো হয়নি। মাইকিংও করা হচ্ছে না। তবে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের বিভিন্ন মাধ্যমে বার্তা পাঠানো হচ্ছে।’
এই আসনে আরও লড়ছেন জাপার এম এ হালিম, ইসলামী আন্দোলনের ইবাদুল হক খালাসি, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ কামরুল হাসান বারী, জাগপার নিজাম উদ্দিন অমিত এবং জাকের পার্টির রবিউল ইসলাম।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেন আজাদ। তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে মারধর করা হয়েছে। পুলিশ দিয়ে কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একরকম অবরুদ্ধ হয়ে আছি।’
তবে কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তপন কুমার ঘোষ বলেন, ‘আপনি কেশবপুরে এসে দেখেন ধানের শীষের কয়টি পোস্টার আর নৌকার কয়টি পোস্টার টাঙানো আছে। বিএনপির অভিযোগ ঠিক নয়।’
এই আসনে অন্য প্রার্থীরাও প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাঁরা হলেন জাপার মাহবুব আলম, ইসলামী আন্দোলনের আবু ইউসুফ বিশ্বাস এবং জাকের পার্টির মো. সাইদুজ্জামান।