তাঁর নাম আলী আকবর। বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাটা ইউনিয়নের উত্তর কৃষ্টপুর গ্রামে। তাঁর দাবি, এখন তাঁর বয়স হয়েছে ১১১ বছর। এ সময়ের মধ্যে দেখেছেন দেশ বিভাজন। ’৭০-এ শেখ মুজিবুর রহমানের নৌকার ঢেউ দেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখেছেন। আর মাত্র কয়েক দিন পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কেন্দ্রে গন্ডগোল না হলে এবারও তিনি ভোট দিতে যাবেন। কারণ, এই একটি দিনই নিজেকে দেশের মালিক বলে মনে হয় তাঁর।
আলী আকবরের চার ছেলে ও চার মেয়ে। তিনি একসময় মিস্ত্রির কাজ করতেন। অসম্ভব শারীরিক পরিশ্রম করতে পারতেন। এখন বয়সের ভারে শরীর দুর্বল হয়েছে বটে। তবে তেমন কোনো রোগব্যাধি নেই। এখনো তাঁর জীবনীশক্তি অফুরান। একটানা অনেকক্ষণ হাঁটতে পারেন। কোনো অসুবিধাই হয় না। আশা করছেন, এবারও হেঁটে হেঁটেই তিনি ভোটকেন্দ্রে যাবেন। গত সোমবার উপজেলা সদরে একটি দোকানে তাঁর সঙ্গে কথা হয়।
জানতে চাইলে আলী আকবর প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো ভোটের দিন তিনি হেঁটে কেন্দ্রে গেছেন। ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এবারই বা তা অন্য রকম হবে কেন! এবারও ভোট দিতে যাবেন। তবে ভোটের দিন গন্ডগোল হতে পারে, এমন আশঙ্কা তাঁর আছে। এ কারণে বলেন, যদি গন্ডগোল না হয়, তিনি ভোট দিতে যাবেন। কারণ তিনি মনে করেন, গণতান্ত্রিক দেশে ভোট মানুষের হাতিয়ার। নির্বাচনে কে কাকে সমর্থন করবেন, সবটাই নিজস্ব মত। সেটা যে করেই হোক নিজেই দিতে হবে। কারণ, জনগণই তো দেশের মালিক। আর ভোটের দিন বিষয়টি তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন।
আলী আকবর বলেন, এখনকার মতো এত জমজমাট প্রচার-প্রচারণা তখন ছিল না। শুধু প্রচারপত্র বিতরণ করা হতো। প্রচার-প্রচারণা চলত হাটের দিন। এখনকার মতো তখন পার্টি থেকে টাকা পাওয়া যেত না। বরং নিজের পকেট থেকে খরচা করতে হতো। চাঁদা দিত সাধারণ মানুষ। এলাকায় তখন এখনকার মতো দ্রুত যাতায়াতের ব্যবস্থাও ছিল না। যানবাহনের মধ্যে ছিল গরু-মহিষের গাড়ি। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ গরু কিংবা মহিষের গাড়িতে চড়ে ভোটকেন্দ্রে যেত। তখন ভোট ছিল অধিকার আদায়ের মোক্ষম অস্ত্র। তখন এখনকার মতো হানাহানি ও মারামারি ছিল না। ধরপাকড়ের তো প্রশ্নই ছিল না।