একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের গুরুত্বপূর্ণ পর্বগুলোতে অনুঘটকের ভূমিকায় ছিলেন ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মুখ্য সচিব পি এন হাকসার। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারতের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইন্দিরা গান্ধীর একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গেও পি এন হাকসারের পারস্পরিক শ্রদ্ধা আর আস্থার চমৎকার এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাই তিয়াত্তরে সিমলা চুক্তিতে ভারত আর পাকিস্তানের কারণে যাতে বাংলাদেশের স্বার্থ নষ্ট না হয়, সেটিও নিশ্চিত করেছিলেন হাকসার।
পি এন হাকসারের গুরুত্বপূর্ণ এই ভূমিকার সাক্ষ্য পাওয়া গেছে ওই সময়ে ভারতের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অশোক মিত্রের আ প্রেটালার্স টেইল, অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের আনট্রানকুইল রিফ্লেকশনস: দ্য ইয়ারস অব ফুলফিলমেন্ট আর ভারতের কংগ্রেস নেতা ও সাবেক মন্ত্রী জয়রাম রমেশের ইন্টারটোয়ান্ড লাইভস: পি এন হাকসার এন্ড ইন্দিরা গান্ধী বইয়ে।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান লিখেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বাঁক পরিবর্তনের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ভারতের। আর ভারতের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনুঘটক ছিলেন পি এন হাকসার।
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে দুই মাসের অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে যান পি এন হাকসার। সস্ত্রীক বেড়াচ্ছিলেন জেনেভা, প্যারিস, লন্ডন, মস্কোয়। মস্কোতে থাকার সময় তাঁর কাছে বার্তা গেল, তাঁকে ছাড়া ইন্দিরা গান্ধী ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে যেতে চাইছেন না। ওই সফরের মূল বিষয়ই ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন আদায়। ছুটি ফেলে পি এন হাকসার যোগ দেন ৪ ও ৫ নভেম্বর হোয়াইট হাউসের বৈঠকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন উত্তেজনা কমাতে ইন্দিরা গান্ধীকে সীমান্ত থেকে ভারতীয় সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেন। এই পর্যায়ে ইন্দিরা গান্ধীকে সহায়তা করতে গিয়ে হাকসার বলেন, সৈন্য সরানোর ক্ষেত্রে ভারতের সমস্যা রয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতের অবস্থানের এক জোরালো বার্তা পায় হোয়াইট হাউস।
১৯৭১ সালে ভারত সরকারের বাংলাদেশ-সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়কারী ছিলেন পি এন হাকসার। চন্দ্রশেখর দাশগুপ্তের মতে, সামরিক, কূটনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ পদক্ষেপের সমন্বয়ে ব্যাপক পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরির মূল মস্তিষ্ক ছিলেন তিনি। ১৯৮১ সালে মৃত্যুবরণ করেন হাকসার। (শেষ)