>প্রতিষ্ঠান ও নিজের নামে ৭৫৪ শতাংশ জমি কিনলেও হলফনামায় উল্লেখ নেই।
নিজের ও নিজ মালিকানার প্রতিষ্ঠানের নামে কেনা ৭৫৪ শতক জমির তথ্য চেপে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাভারের সাংসদ এনামুর রহমানের বিরুদ্ধে। তিনি এবারও ঢাকা-১৯ (সাভার) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামায় এনামুরের নামে কৃষি বা অকৃষি কোনো জমি দেখানো হয়নি। পেশা লিখেছেন চিকিৎসক। তিনি নিজেকে এনাম মেডিকেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল ও এনাম এডুকেশন অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিলেজের চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে এনাম এডুকেশন অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিলেজ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সাংসদ এনামুর ওই কাগজসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান এবং নিজের নামে ৭৫৪ শতাংশ জমি কিনেছেন বলে ধামরাই উপজেলার কালামপুর সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের নথি ঘেঁটে তথ্য পাওয়া যায়। এই জমির তথ্য এনামুরের হলফনামায় নেই। তিনি ২০১৩ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ঢাকার ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নের জয় তেঁতুলিয়া ও ভাদালিয়া এবং রোয়াইল ইউনিয়নের সুঙ্গর মৌজায় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ২৪টি দলিলের মাধ্যমে এসব জমি কেনেন। ওই ২৪টি দলিলে উল্লিখিত জমির মূল্য ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তবে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ওই পরিমাণ জমির বাজারদর ৬ কোটি টাকার বেশি।
জানতে চাইলে বলেন, প্রতিষ্ঠানের নামে জমি থাকায় তা হলফনামায় দেখানো হয়নি। তাঁর নিজের নামে কোনো জমি কেনা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। এনাম এডুকেশন অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিলেজের অস্তিত্ব না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জমি কেনা হয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে অবকাঠামো করা সম্ভব হয়নি।
এনামুর রহমানের ২০১৪ ও ২০১৮ সালের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৪ সালে তাঁর নিজের নামে সোয়া ১৮ শতাংশ অকৃষিজমি ছিল। তবে তাঁর স্ত্রীদের (তিন স্ত্রী) নামে কৃষি বা অকৃষি কোনো জমি ছিল না। এবারের হলফনামায় তাঁর নামে কৃষি বা অকৃষি কোনো জমি দেখানো হয়নি। স্ত্রীর নামে ৫৭৭ শতাংশ অকৃষিজমি দেখানো হয়েছে। কিন্তু জমি কোন স্ত্রীর, তা উল্লেখ করা হয়নি। একাধিক স্ত্রীর কথাও তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেননি।
কৃষি ও অকৃষিজমির কথা উল্লেখ না করলেও জয় তেঁতুলিয়া, ভাদালিয়া ও সুঙ্গর এলাকায় এনামুর রহমান ও এনাম এডুকেশন অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিলেজের পক্ষে কেনা প্রায় সব জমিতে চাষাবাদ হতে দেখা যায়। কিন্তু সেখানে ওই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিলেজ নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বের কথা এলাকার লোকজন বলতে পারেননি।
২০১৪ সালের হলফনামায় এনামুর রহমানের ঠিকানা ছিল সাভারের থানা রোডের পার্বতীনগরের ৭/৩ নম্বর হোল্ডিং। এবার ঠিকানা দেওয়া হয়েছে সাভারের থানা রোডের পার্বতীনগরের ৯/৩ নম্বর হোল্ডিং। ওই দুই ঠিকানায় গিয়ে পাওয়া যায় এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। তবে ওই হাসপাতালের দশম তলায় তাঁর বাসা রয়েছে বলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাভারের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাসেল হাসান বলেন, হলফনামায় তথ্য গোপন করা অপরাধ। কোনো প্রার্থী তাঁর হলফনামায় তথ্য গোপন করলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে।