জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ১০ বছরে ১৬৮টি মামলা হয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক মামলা মাথায় নিয়েই তিনি কারাগার থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
তবে সুলতান সালাউদ্দিনের শুধু মামলাই বাড়েনি, বেড়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, আয়। ব্যক্তিগত গাড়িও হয়েছে। তাঁর স্ত্রীরও আয় বেড়েছে। সেই সঙ্গে স্ত্রীর ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার দ্বিগুণ হয়ে ৮০ ভরি হয়েছে। নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনে বিএনপি থেকে সুলতান সালাউদ্দিন এবং তাঁর ভাই জেলা বিএনপির সভাপতি শামছুল আলম ওরফে তোফাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরে তাঁরা দুজনেই মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই–বাছাইয়ে দুজনেরই মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। সুলতান সালাউদ্দিন ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে অংশ নেন।
নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জমা দেওয়া হলফনামা থেকে জানা যায়, সুলতান সালাউদ্দিনের নামে ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়েরকৃত ১৩৯টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৮২টি মামলা বিচারাধীন এবং ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। এ ছাড়া এ সময়ে দায়েরকৃত আরও ২৯টি মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে। মামলাগুলো বেশির ভাগই ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা হয়েছে। বিস্ফোরকদ্রব্য আইন, সন্ত্রাস দমন আইন, দ্রুত বিচার আইন ও বিভিন্ন ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে মামলাগুলো দায়ের করা হয়। এ ছাড়া অতীতে সুলতান সালাউদ্দিনের নামে চারটি মামলা হয়েছিল। তার সবগুলো থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।
সুলতান সালাউদ্দিনের ২০০৮ সালের জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, তিনি শুধু তিশা এন্টারপ্রাইজ নামক একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন। এবার জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, ১০ বছরের ব্যবধানে শুধু তিশা এন্টারপ্রাইজ নয়, আরও পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন তিনি। এগুলো হচ্ছে টাঙ্গাইল শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার মেসার্স শর্মা হাউস, গাজীপুরের টঙ্গী হানিফ প্লাজায় মেসার্স সামিহা ট্রেডার্স, ঢাকার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের মেসার্স সামিহা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স সুবাতন করপোরেশন এবং ঢাকার ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের নোভেলটি মার্কেটিং।
>তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও আয়ও বেড়েছে। তাঁর স্ত্রীরও আয় বেড়েছে। সেই সঙ্গে স্ত্রীর ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার দ্বিগুণ হয়ে ৮০ ভরি হয়েছে।
২০০৮ সালে তাঁর নিজের ও স্ত্রীর ব্যবসা থেকে কোনো আয় ছিল না। এবার তাঁর নিজের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ২০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৭৯ টাকা এবং তাঁর স্ত্রীর ব্যবসা থেকে আয় ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩০ টাকা। সেই সময় স্ত্রীর ৪০ ভরি সোনার গয়না ছিল। এবার তা বেড়ে হয়েছে ৮০ ভরি। সেবার সুলতান সালাউদ্দিনের কোনো নগদ টাকা না থাকলেও এখন স্ত্রীর নামে নগদ দুই লাখ টাকা রয়েছে। ২৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার জন্য তিনি ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ৪৮৫ টাকা পূবালী ব্যাংক ঢাকার মিরপুর শাখা থেকে ঋণ নিয়েছেন। এ ছাড়া ১০ বছর আগে তাঁর টেলিভিশন ফ্রিজসহ ৯০ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং ১ লাখ টাকা মূল্যের আসবাব ছিল। এখনো এই মূল্যের সামগ্রীগুলোই তাঁর রয়েছে বলে এবারের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
শামছুল আলম বলেন, সুলতান সালাউদ্দিনের মনোনয়ন কোনো কারণে বাতিলের আশঙ্কায় তাঁকেও (শামছুল) বিকল্প প্রার্থী হিসেবে দল থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তাঁর (সুলতান সালাউদ্দিন) বিরুদ্ধে মামলা সম্পূর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুলতান সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, এসব মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক।