আ.লীগের বর্ধিত সভার নামে নির্বাচনী সভা

>

বিজয় দিবস উপলক্ষে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় এই বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গতকাল শনিবার ‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস’ উপলক্ষে বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই অনুষ্ঠান নির্বাচনী সভায় পরিণত হয়, যা নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল।

আলফাডাঙ্গা বাজারের পশ্চিম প্রান্তে শ্রীশ্রী দামোদার আখড়া চত্বরে শামিয়ানা টানিয়ে প্যান্ডেল বানিয়ে সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে চার শতাধিক চেয়ারে নেতা-কর্মীদের বসার ব্যবস্থা ছিল। বেলা সোয়া ১১টা থেকে সভা চলে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। সভায় বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা-মধুখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-১ নির্বাচনী এলাকার তিন উপজেলার ১৯ জন বক্তব্য দেন। তবে উপজেলার ইউনিয়ন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কেউ বক্তব্য দেননি।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আকরাম হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ফরিদপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মনজুর হোসেন ওরফে বুলবুল। সভায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক সাংসদ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কাজী সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি লিয়াকত সিকদার, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আরিফুর রহমান প্রমুখ।

মনজুর হোসেন তাঁর বক্তব্যের শেষে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে বর্ধিত সভায় উত্থাপিত নির্দেশনা সঠিকভাবে পালনের জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানান।

লিয়াকত সিকদার বলেন, ‘আমি মনোনয়ন পেলে সবাইকে এক করতে পারতাম কি না জানি না। তবে আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষেত্রে যাঁরা ভূমিকা রাখতে পারবেন, সেই তিন উপজেলার নেতারা আজ এক মঞ্চে হাজির। তাই এটি তিন উপজেলারই বর্ধিত সভা ও নির্বাচনী সভা।’

এই আসনের বর্তমান সাংসদ আবদুর রহমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাজাহান মীরদাহ অভিযোগ করেন, ‘সোমবার বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। অথচ দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি কিছুই জানি না। শুক্রবার রাত পৌনে নয়টায় সভাপতি টেলিফোন করে ওই সভায় থাকতে অনুরোধ করেছেন।’

সাংসদবিরোধী নেতা হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এম মোশাররফ হোসেন তাঁর বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগের জবাবে ‘কৌশলগত’ ভুল স্বীকার করে সাধারণ সম্পাদককে ওই সভায় দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানান।

সমাপনী বক্তব্যে এস এম আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমরা মূলত বিজয় দিবস নিয়ে সভা আহ্বান করেছিলাম। কিন্তু তিন উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীরা একসঙ্গে হাজির হওয়ায় এখানে নির্বাচনের বিষয় নিয়ে বেশি বক্তব্য এসেছে। কিন্তু এটাকে কোনো নির্বাচনী সভা বলা যাবে না। সভা চলাকালে আমার কাছে আজকের সভায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে ফোন এসেছে। আজকের সভায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের থেকে আগত নেতারা আমাদের সঙ্গে কথা বলে যাবেন।’

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম। এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গার ইউএনওর কাছ থেকে পুরোপুরি জেনে নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাব।’