সব আসনেই খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনটি আসনেই বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। সকালে ফেনী-১ আসন ও দুপুরে ‘জিয়া পরিবারের আসন’ হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া-৭ আসনে খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থী মোরশেদ মিল্টনেরও মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে বাকি দুটো আসনে খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজার কথা উল্লেখ করে ফেনীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদ উজ জামান আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। খালেদা জিয়া ছাড়াও ওই আসনে বিএনপির আরেক প্রার্থী ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূর আহম্মদ মজুমদার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান ও আবুল বাশার চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে ওই আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী রফিকুল আলম মজনুর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মামলায় সাজার বিষয়টি উল্লেখ করে বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন বগুড়ার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ। বগুড়া-৬ আসনে বগুড়া পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ না করায় খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এ কে এম মাহবুবুর রহমানের মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়েছে। তবে ওই আসনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলের আশঙ্কায় ওই সব আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থীকে বিকল্প হিসেবে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়েজ আহাম্মদ বলেন, বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন খালেদা জিয়া। দুর্নীতির মামলায় তাঁর দণ্ড হয়েছে এবং তিনি বর্তমানে কারাগারে সাজা ভোগ করছেন। আইন অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধে দুই বছর বা তার বেশি সাজা হলে দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না । এ কারণে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
দলীয় চেয়ারপারসনের মনোনয়নপত্র বাতিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবুর রহমান বলেন, বগুড়া-৬ ও ৭ আসন জিয়া পরিবারের। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত এসব আসনে বিএনপির সঙ্গে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি। এবারও দুটি আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের চেয়ারপারসন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। কিন্তু চেয়ারপারসনকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সরকার অনেক আগে থেকেই নানা ষড়যন্ত্র ও কূট কৌশল চালিয়ে আসছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলায় দণ্ড দিয়ে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে।
মাহবুবুর রহমান বলেন, আগামী নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমেই সরকারের এই ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দেবে জনগণ। চেয়ারপারসনকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ায় দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিংবা দলের হাইকমান্ড যাঁকে চাইবে, তিনি ধানের শীষের প্রার্থী হবেন বলে জানান মাহবুবুর রহমান।
খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও তাঁকে তিনটি আসনে প্রার্থী করে বিএনপি। আসনগুলো হলো ফেনী-১ এবং বগুড়া-৬ ও ৭। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে সাজা ভোগ করছেন তিনি। কারাগারে যাওয়ার আট মাসের মাথায় ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া ৩০ অক্টোবর খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির সাজা কমানোর আবেদন খারিজ করে দিয়ে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।
বগুড়া-৬ আসনে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে সাংসদ হন সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী মুজিবর রহমান। ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতিবারই এখানে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন খালেদা জিয়া। প্রতিবারই বিপুল ভোটে তিনি জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার পর উপনির্বাচনে প্রার্থী হন সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।
এ আসনে মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংসদ নূরুল ইসলাম ওমর, বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) জেলা কমিটির সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, ইসলামী আন্দোলনের আবু নোমান মোহাম্মদ মামুনুর রশীদসহ অন্যদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বগুড়া-৭ আসনের গাবতলী উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভিটা। এ আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত প্রার্থী ছিলেন খালেদা জিয়া। তবে প্রতিবারই তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচন হয়েছে। তিনটি উপনির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়ে সাংসদ হন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার। ২০০৮ সালে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার পর উপনির্বাচনে প্রার্থী হন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
এবারের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল হওয়ার আশঙ্কায় এ আসনে বিকল্প প্রার্থী করা হয় গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটনকে। তবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেননি উল্লেখ করে তাঁর মনোনয়নপত্রও বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
মোরশেদ মিল্টন জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করে কাগজপত্র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন আগেই। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন—এমন কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি মোরশেদ মিল্টন।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার বিরুদ্ধে মোরশেদ মিল্টন নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
ওই আসনে জাপার বর্তমান সাংসদ মুহাম্মদ আলতাফ আলীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে বগুড়া-৬ আসনে জাকের পার্টির ফয়সাল বিন শফিক এবং বগুড়া-৭ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) জেলা সভাপতি মোস্তফা আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও তাঁর দলীয় মনোনয়ন না থাকায় তা বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।