নীলফামারী জেলার চারটি আসনের মধ্যে দুটিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে প্রার্থীতার জট রয়েছে। ওই দুইটি আসনে কোন দলের প্রার্থী শেষ পর্যন্ত জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকবেন, এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। আসন দুটি হচ্ছে—নীলফামারী-২ (জেলা সদর) ও নীলফামারী-৩ (জলঢাকা)।
নীলফামারী-২ (সদর) আসনে প্রার্থীতার জট রয়েছে ২০ দলীয় জোটে। এই আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সামসুজ্জামান দলের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। অপরদিকে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মনিরুজ্জামান মণ্টু মনোনয়ন দাখিল করেছেন ধানের শীষ প্রতীকে।
একইভাবে নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি পৌর মেয়র ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী কমেট। অপরদিকে ওই জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সুরা সদস্য আজিজুল ইসলাম মনোনয়নপত্র জমা করেছেন ধানের শীষ প্রতীকে। এ নিয়ে ওই দুই আসনে জোটের প্রার্থিতা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ।
নীলফামারী-২ সদর আসনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দাবি করছেন, জোটের প্রার্থী হিসেবে বরাবরই জামায়াতকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোবারই তারা জয় পায়নি। এ কারণে এবারের নির্বাচনে এ আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া প্রয়োজন।
জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা তো বরাবরই এ আসনে জোটের মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু কোনোবারই সফল হতে পারেননি। এ কারণে আমরা চাই এবার বিএনপির প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে পরীক্ষা করা হোক।’
জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মো. মনিরুজ্জামান মণ্টু বলেন, ‘২০ দলীয় জোটে এ আসনে আমিই প্রার্থী হব। বিএনপির সঙ্গে আমরা যেহেতু আছি, সে হিসেবে ঐক্যজোটেও আছি।’ ২০ দলীয় জোটে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। কিন্তু মনিরুজ্জামান মণ্টু বলছেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। মনোনয়ন না দেওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই।
তবে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সেলিম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, জোটের প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জামায়াতের দাবি সঠিক নয়।
গত ৮ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ৬৯ হাজার ৯৬০ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের আব্দুল লতিফ পেয়েছিলেন ৬৫ হাজার ৮৩৫ ভোট। নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনেও জয়ী হন আসাদুজ্জামান নূর।
অন্যদিকে নীলফামারী-৩ ( জলঢাকা) আসনে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের মিজানুর রহমান চৌধুরী ৬৪ হাজার ১৮০ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছিলেন। নবমে জাতীয় পার্টি এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ আসন থেকে জয়ী হন।
নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় আছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সুরা সদস্য আজিজুল ইসলাম। ওই আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী। জামায়াতের দাবি, সেখানে তাদের প্রার্থী একাধিকবার জয় পেয়েছেন। জলঢাকা জামায়াতের ভোটব্যাংক। তাই তারা এবারও ওই আসনে মনোনয়ন পেলে জয়লাভ করতে পারবেন।
বিএনপির দাবি, বরাবরই ওই আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। এতে করে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থাও শক্তিশালী হচ্ছে না। এ আসনে বিএনপির প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আসনটিতে জয় পাওয়া সহজ হবে।
জলঢাকা পৌর বিএনপির সভাপতি আহমেদ সাঈদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই আসনে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই ভালো। বরাবরই জোটের প্রার্থী হিসেবে আমরা এ আসনে জামায়াতের প্রার্থীকে দেখছি। এবার এ আসনে বিএনপির প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
জামায়াতের প্রার্থী আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি। ২০ দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের প্রতীক হবে।’
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সামসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন,‘অনেক আসনেই একাধিক প্রার্থীকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যেসব আসনে জামায়াতের প্রার্থীকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়েছে, সেখানে বিএনপির প্রার্থীও রয়েছেন। আগামী ৯ তারিখের মধ্যে জোটের পক্ষে একক প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। জেলায় জামায়াতের চেয়ে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা ভালো। এ ক্ষেত্রে এবার নীলফামারী-২ ও নীলফামারী-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন নেতা-কর্মীরা।’