গণভবনে প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে: রফিকুল
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক দেড় শতাধিক কর্মকর্তার বৈঠকের ঘটনায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে শেখ হাসিনা নির্বাচন করলেও লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি এখানে প্রযোজ্য হবে না। তবে গণভবনে প্রচারণা চালালে আচরণবিধি ভঙ্গ হবে।
আজ শুক্রবার নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম এ কথা বলেন। সম্প্রতি গণভবনে সশস্ত্র বাহিনীর দেড় শতাধিক কর্মকর্তার আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। সরকারি বাসভবনে এ ধরনের অনুষ্ঠান করা আচরণবিধির লঙ্ঘন কি না জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার এ কথা বলেন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাসভবন ছেড়ে তো চলে যেতে পারবেন না। কারও সঙ্গে দেখা করতে গেলে কোথায় দেখাটা করবেন? রাস্তার মধ্যে এসে? ওনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন, ওনার সঙ্গে দেখা করে ওনার নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘এখানে আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু আচরণবিধিমালা বুঝি, আমার কাছে মনে হচ্ছে না যে, এটায় কোনো ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘন হতে পারে।’
দেখা করার জন্য দলীয় কার্যালয় রয়েছে- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, “ভাই, বাসভবন ওটা। গুলাইয়েন না কিন্তু। কেউ আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়, আমি কি রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখা করব? তারা আসছেন আমার বাসাতে, আমাকে বাসাতেই দেখা করতে হবে।
কোনো রাজনৈতিক দলের চাপ অনুভব করছেন কি না- সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে রফিকুল বলেন, “আমরা যেহেতু নির্বাচন কমিশন, আমাদের প্রতি উভয় পক্ষের দাবি-দাওয়া আছে। ওনারা দাবি-দাওয়া প্রকাশ করছেন। এর মধ্যে যতটুকু যৌক্তিক দাবি হবে, ততটুকু আমরা বিবেচনা করব।”
বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে যদি কেউ মনোনয়নপত্র জমা না দিতে পারেন তাহলে তিনি কমিশনে এসে অথবা আদালতের কাছে প্রতিকার চাইতে পারেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচন আয়োজনে মূল চ্যালেঞ্জ একটি,আর সেটি হচ্ছে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা। নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ কী? এই প্রশ্নের উত্তরে মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী প্রশাসন, নির্বাচনী প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত বিশাল জনগোষ্ঠীকে এক জায়গাতে এনে একই সুরে, একইভাবে কাজ করানোই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তার বাইরেও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট এরা নির্বাচনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সবাইকে সহমতে এনে ব্যবস্থাপনা করা আসলেই বড় চ্যালেঞ্জ।
কোন বিষয়গুলোকে বর্তমানে গুরুত্ব দিচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে প্রত্যেকটা জিনিসই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একটা বিষয় বাদ দিলেই নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে তুলে আনা সম্ভব হবে না। নির্বাচনটা ইঞ্জিনের মতো। একজন ম্যাকানিককে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় ইঞ্জিনের কোন অংশটি গুরুত্বপূর্ণ, তিনি বলবেন সব অংশই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইঞ্জিনের একটা মাত্র স্ক্রু যদি না থাকে, তাহলে গাড়ি চলবে না। নির্বাচনে যা যা আছে প্রত্যেকটা জিনিসই গুরুত্বপূর্ণ।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষ খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার পেশাদারি। পেশাদারি নিয়ে যে কোনো লোকই যদি কাজ করেন, তাহলে কোন লোকটা কাজ করলেন, সেটা দেখার বিষয় না। আমি রফিকুল ইসলাম কমিশনার হিসেবে আছি। রফিকুল ইসলাম না, আমার গুরুত্বটা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে । থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) যিনি আছেন, নাম যাই হোক, ব্যক্তি উনি যেই হোন না কেন, ওনার পেশাদারি যদি ঠিক রাখেন, তাহলে নির্বাচনে তার ওপর প্রভাবটা স্টাবলিশড হয়ে যাবে। তিনি পেশাদারত্ব নিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। ওই পেশাদারির জায়গাটাকে ঠিক করতে চাইছি। সমস্ত কিছুকে ওলট-পালট করে দিয়ে এই পেশাদারি ঠিক করা যাবে বলে আমি মনে করি না।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে তো শত শত অভিযোগ। আপনারা কি মনে করছেন প্রতিটি অভিযোগ নিয়ে আমাদের দৌড়াতে হবে? কেন আপনারা মনে করছেন, যে আমরা অভিযোগ আমলে নিচ্ছি না? ‘যেমন দাবি আছে সব ওসিকে পরিবর্তন করা, ইউএনও, ডিসিকে পরিবর্তন করা। এদের পরিবর্তন করতে যে বিশাল বাজেট লাগবে, অন্যান্য সরকারের অন্যান্য কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়ে যাবে। আমরা কম এই সব কিছু করতে পারি! আমরা সরকার নই, নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকালীন হোক আর যেটা হোক, একটা সরকার আছে। সংবিধান অনুযায়ী সেই সরকারের কাছে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া আছে। ওনাদের দায়িত্ব তো আমাদের পালন করার কথা না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যদি কেউ প্রভাব বিস্তার করে-তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। সে সেক্রেটারিও যদি হয়, আমরা ব্যবস্থা নেব। আইজিপি হলেও ব্যবস্থা নেব। আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করছে, এই মর্মে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও উপাত্ত থাকতে হবে এবং কমিশনকে সন্তুষ্ট হতে হবে।
ঐক্যফ্রন্টের অভিযোগের তালিকার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ওনারা যে চিঠিপত্র দিয়েছেন, আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি। যেগুলোতে আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি. সেগুলো আমলে নিয়ে কার্যকর করেছি। হুট করে আমাকে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন-ব্যবস্থা নেন। প্রক্রিয়া ছাড়া তো এটা করা সম্ভব না।’