>আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওপর ভর করেই জাতীয় পার্টির দুজন প্রার্থী জয় পেয়েছিলেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা জেলার চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতে নিজেদের প্রার্থী চায় মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি (জাপা)। ইতিমধ্যে একটি আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। জাপার স্থানীয় নেতাদের দাবি, জোটগতভাবে অংশ নিলে এসব আসনে জয়লাভ সহজ হবে। আর আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওপর ভর করেই জাতীয় পার্টির দুজন প্রার্থী জয় পেয়েছিলেন। এখনকার চিত্র ভিন্ন। প্রার্থী জনপ্রিয় না হলে জয়লাভ করা কঠিন হবে।
জেলার চারটি আসনের মধ্যে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাপা সাতক্ষীরা-২ (সাতক্ষীরা সদর) ও সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর ও কালীগঞ্জের একাংশ) আসনে নির্বাচন করে জয়লাভ করে। এবার দলটি ওই দুটির পাশাপাশি সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনও চায়।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে সাতক্ষীরা-২ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাপার এম এ জব্বারের কাছে জামায়াতের প্রার্থী মো.আবদুল খালেক মণ্ডল ১৮ হাজার ৮৬৪ ভোটে পরাজিত হন। সাতক্ষীরা-৪ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাপার এইচ এম গোলাম রেজার কাছে জামায়াতের প্রার্থী জি এম নজরুল ইসলাম ৩৩ হাজার ৭৫৮ ভোটে পরাজিত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য জেলা জাপার সহসভাপতি আবদুস ছাত্তার মোড়ল সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর এলাকার চায়ের দোকানদার আবদুল আজিজ জানান, তাঁর দোকানে বসে অনেককে আলোচনা করতে শুনেছেন, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য একটি আসন রেখে অন্য তিনটি ছেড়ে দেওয়া হবে মহাজোটকে। একই কথা বলেন সদ্য মাস্টার্স পাস করা কনক দাস। তিনি বলেন, শহরময় লোকজন বলছেন, আওয়ামী লীগ মহাজোটকে তিনটি আসন ছেড়ে দিচ্ছে। তবে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আরাফাত হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ দুটি আসন রেখে দুটি ছেড়ে দেবে। সে ক্ষেত্রে সাতক্ষীরা-৩ আসনটি ছাড়াও আর একটি রাখবে আওয়ামী লীগ। এ ধরনের জল্পনাকল্পনার শেষ নেই।
সাতক্ষীরা জেলা জাপার সভাপতি শেখ আজাহার হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে আলোচনা চলছে। সমঝোতা না হলে চারটি আসনে তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। জোটগতভাবে হলে তাঁরা সাতক্ষীরা-১, ২ ও ৪ আসনে লড়তে চান—কথা কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানো হয়েছে। এসব আসনে দলের অবস্থান শক্তিশালী। তবে কেন্দ্রের যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে তাঁরা প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা-১ আসনে জাপার প্রার্থী হতে চান সৈয়দ দিদার বখত। তিনি এরশাদ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। সেই সময় এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। তিনি একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি।
১৯৭৩ সালের পর আওয়ামী লীগ জনপ্রিয় প্রার্থী দেওয়ার পরও সাতক্ষীরা-২ আসনে জয় পায়নি। ২০০৮ সালে মহাজোটের পক্ষে জাপার প্রার্থী এম এ জব্বার জামায়াতের প্রভাবশালী প্রার্থী আবদুল খালেক মণ্ডলকে পরাজিত করেন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাপার প্রার্থী তাঁর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন। ২০১৪ সালের প্রেক্ষাপট কারও অজানা নয়। তিনি নিজে এই আসন থেকে লড়তে চান।
সাতক্ষীরা-৪ আসনে ২০০৮ নির্বাচনে মহাজোটের পক্ষে জাপার প্রার্থী এইচ এম গোলাম রেজা জয়ী হন। এবার ওই আসন থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি প্রার্থী হলে জয়লাভ করা খুবই সহজ হবে।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আলী বলেন, জেলার চারটি আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ও জনপ্রিয় প্রার্থী রয়েছেন। শরিকদের যেসব আসন ছেড়ে দেওয়া হবে, ওই সব আসনে জয়লাভ করা কঠিন হবে। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে জাপার প্রার্থী জয়লাভ করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জাপার প্রার্থী পাঁচটি (বর্তমানে চারটি) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কোনো প্রার্থী ২০ হাজারের বেশি ভোট পাননি।