আকস্মিক তফসিল ঘোষণা একতরফা নির্বাচনের ইঙ্গিত: রিজভী
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, রাজনৈতিক সংকট সমাধান হওয়ার আগেই আকস্মিকভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানেরই সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। সকল বিরোধী দলের দাবি ছিল, মাঠ সমতল এবং সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করে যেন তফসিল ঘোষণা করা হয়। এমনকি পর্যাপ্ত সময়ও রয়েছে কমিশনের হাতে। রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরোধে নির্বাচন পিছিয়ে দিলে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটত না।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের মতামতকে উপেক্ষা করে শুধু সরকারের নির্দেশে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে কিছু নেই। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ‘পাইকারি হারে’ গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। পুলিশি তল্লাশির নামে বাড়িতে বাড়িতে তাণ্ডব চলছে। চারদিকে শুধু আতঙ্ক আর ভয়। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক আওয়ামী লীগের কয়েকজন মন্ত্রী ও সাংসদ দণ্ডিত হলেও তাঁরা স্বপদে বহাল আছেন। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যা’ মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দী করে সুচিকিৎসার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আবারও একতরফা নির্বাচন করতে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে জোরপূর্বক কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সরকারের উদ্দেশে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সময় অত্যাসন্ন, যে কারাগার অন্যের জন্য তৈরি করা হয়, সেই কারাগারে নিজেদের ঢুকতে হয়। এটাকেই বলে প্রকৃতির প্রতিশোধ। নিজের খোঁড়া গর্তে নিজেদের পড়তে হয়, এ বিষয়টি ভাবার জন্যও ক্ষমতাসীনদের অনুরোধ করছি।’ তিনি অভিযোগ করেন, আসলে স্বাধীন বিচার বিভাগ ও আওয়ামী লীগ একসঙ্গে চলতে পারে না। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সকল রাজবন্দীকে মুক্তি দিয়ে দেশের সংকট সমাধান করতে হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ ও প্রচারে সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি করার কথাও বলেন রিজভী।
রাজশাহীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের বিষয়ে বিএনপির মুখপাত্র রিজভী বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজশাহী ও আশপাশের জেলায় চলছে গ্রেপ্তার অভিযান। নেতা-কর্মীরা যেন সমাবেশে যোগ দিতে না পারেন, সে জন্য শহরে ঢোকার বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে চিরুনি অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের বিপরীত কর্মকাণ্ড চলছে। গতকাল সিইসি বলেছেন, নির্বাচনের ভূমি সমতল থাকবে।
সিইসির উদ্দেশে রিজভী প্রশ্ন করেন, ‘নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, সমাবেশে বাধা প্রদানকে কি সমতল ভূমি বলে? রাজনৈতিক ময়দান সম্পূর্ণভাবে সরকারের অনুকূলে সমতল রাখার যাবতীয় বন্দোবস্ত করছে নির্বাচন কমিশন’।
রিজভী বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে ‘বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভাও পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ। সেখান থেকে অনুষ্ঠানের মাইকসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশ সেখান থেকে যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা জি এস বাবুলসহ ১৮ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।