পা কেটে ফেলতে হলো সুমনের...
মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান ওরফে সুমন (২৫)। অসচ্ছল পরিবারে ছেলে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে অ্যাপভিত্তিক পাঠাওয়ে মোটরসাইকেল চালাতেন। এই মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে ১৫ অক্টোবর মিরপুরে ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন সুমন। অবস্থা এতটাই গুরুতর যে, সুমনের বাম পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এতেও তাঁর জীবন রক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারেননি চিকিৎসকেরা। সুমনের মোটরসাইকেলে যাত্রী ছিলেন জাহিদ হাসান (২৫)। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির এই শিক্ষার্থীর দুটি পা থেঁতলে গেছে। সুমনের মতো জাহিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। ।
সুমনের ভাবী আনিতা বীথি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দেবর সুমন মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের ম্যানেজমেন্টের অনার্সের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সুমনের দু্ই মাস আগে বিয়ে হয়। তবে স্ত্রীকে এখনো তুলে আনা হয়নি। তাঁর বৃদ্ধ বাবা শাফিজুল হাওলাদার প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিতে পরিবার হিমশিম খাচ্ছে। আত্মীয়স্বজন মিলে সুমনকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেন। সুমন পড়ালেখার খরচ জোগাড় ও সংসারে সাহায্য করতে পাঠাওয়ে মোটরসাইকেল চালাতেন। গত সোমবার বেলা একটার দিকে মোটরসাইকেল চালানোর সময় মিরপুরের কালশী রোডে এবিসি ডেভেলপার কোম্পানির একটি বড় মিকশ্চার মেশিনের গাড়ি পেছনে থেকে সুমনের মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে যাত্রীসহ সুমন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান। তখন গাড়িটি সুমন ও জাহিদের পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহত জাহিদ হাসান মিরপুরের উত্তর পীরেরবাগে চাচা আবদুল খালেকের বাসায় থেকে পড়াশোনা করেন। তাঁর বাবার নাম মোরশেদ আলম। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়।
আহত জাহিদ হাসান বলেন, ‘গত সোমবার দুপুরে মিরপুর থেকে পাঠাও মোটরসাইকেলে বারিধারা এলাকায় বসুন্ধরা ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছিলাম। কালশী রোডে এবিসি ডেভেলপার কোম্পানির গাড়িটি আমাদের ওপর তুলে দেয়। আমরা গাড়িটির নিচে চলে যাই। এরপর আর কিছু মনে নাই।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামান শাহীন বলেন, আহত দুই শিক্ষার্থীর অবস্থাই আশঙ্কাজনক। গত বুধবার সুমনের বাম পা কেটে ফেলতে হয়েছে। দুর্ঘটনায় তাঁর ওই পা প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। এখন তার প্লাস্টিক সার্জারির প্রয়োজন। এ ছাড়া সুমনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত রয়েছে। তাই আশঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। আহত জাহিদ ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর দুই পায়ের মাঝে মারাত্মক আঘাত লেগেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, এ ঘটনায় আহত দুজনের পরিবারের পক্ষ থেকে পল্লবী থানায় মামলা হয়েছে।