তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়নি। আলোচনা চালু আছে।
আজ রোববার সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮,২১, ২৫,২৮, ২৯,৩১, ৩২,৪৩ ও ৫৩ ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা ২১ অক্টোবর শুরু হওয়া বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে সংশোধনের দাবি জানান সম্পাদক পরিষদ। পরিষদ বলছে, এই ধারাগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আইনটি সংশোধনের দাবিতে কাল সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবে পরিষদ। এতে শুধু পরিষদের সদস্যরাই অংশ নেবেন।
এই প্রতিবাদ কর্মসূচিটি হওয়ার কথা ছিল গত ২৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সে সময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু কর্মসূচি স্থগিত করে সম্পাদক পরিষদকে আলোচনায় অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানান। এরপর সম্পাদক পরিষদ সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে তাদের মানববন্ধনের কর্মসূচি স্থগিত করে তথ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সঙ্গে ৩০ সেপ্টেম্বর আলোচনায় বসে। তিন মন্ত্রীর পক্ষ থেকে তখন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে এবং আইনটি সংশোধনের লক্ষ্যে আরও আলোচনা হবে। কিন্তু গত দুটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, এটি প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। তিন মন্ত্রী কেন তাঁদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হলেন, তা তাঁদের কোনো একজনের মাধ্যমে জানানোর মতো সৌজন্যটুকু দেখানো হয়নি।
তিন মন্ত্রী কথা রাখেননি মর্মে সম্পাদক পরিষদের অভিযোগকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
সম্পাদক পরিষদের গতকালের সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে ইনু বলেন, সম্পাদক পরিষদ, বিএফইউজে, ডিইউজে ও ডিআরইউয়ের নেতাদের সঙ্গে তাঁরা বসেছিলেন। সেখানে আইনের যেসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, সেসব তাঁরা শুনেছেন। প্রশ্নগুলো শুনে তাঁরা (তিন মন্ত্রী ও এক উপদেষ্টা) বলেছিলেন, আলোচনার যে সূত্রপাত হলো, তা অব্যাহত থাকুক। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাকে জানিয়ে এ বিষয়ে তাঁরা যে দিকনির্দেশনা দেবেন, তার ভিত্তিতে আবার বসা হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, তখন এটাও বলা হয়েছিল, আইনে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলেন কি করলেন না, তার সঙ্গে আলোচনার কোনো সম্পর্ক নেই। যেকোনো আইন পরিমার্জন করা যায়। এ জন্য সরকার আছে, সংসদ আছে। এ জন্য আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। এরই মধ্যে মন্ত্রিসভার দুটি বৈঠক হয়েছে। তার আগেই প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রিসভায় আলোচনার পরিবেশ ছিল না বলে সেখানে আলোচনা হয়নি।
ইনু বলেন, ‘আমরা আশা করছি, যেকোনো সময় আলোচনা হবে। আর আলোচনা হলে আবারও সম্পাদক পরিষদ ও সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হব।’
সম্পাদক পরিষদের কাল সোমবার ডাকা মানববন্ধনের বিষয়ে ইনু বলেন, ‘দাবি তোলা গণতান্ত্রিক পন্থা। এ নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। কিন্তু মানববন্ধন করুন আর না করুন, আমরা আলোচনায় আছি।’