ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ট্রাফিক শৃঙ্খলা একটি জাতির সভ্যতার প্রতীক। সড়ক দুর্ঘটনারোধে চালক, মালিক ও পথচারীদের দায়িত্ব রয়েছে। সবাই সচেতন হলে ট্রাফিকের শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব। সড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ দিনরাত কাজ করছে।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অডিটরিয়ামে আয়োজিত ট্রাফিক সচেতনতামূলক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আছাদুজ্জামান মিয়া। ট্রাফিক সচেতনতামূলক সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। অনুষ্ঠানের শুরুতে আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতিতে ‘ট্রাফিক গাইড বুক’ নামের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে সবার সহযোগিতা চেয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী একজন ব্যক্তি দিনে ৮ ঘণ্টা কাজ করে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা ডিউটি করে থাকে। সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। আইন না মানার সংস্কৃতি আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। রাস্তায় নামলে কেউ আইন মানতে চাই না। ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরাতে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন একান্ত জরুরি।’
আছাদুজ্জামান মিয়া আরও বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করে আমাদের পথ দেখিয়েছে। এ জন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। ট্রাফিকের বিশৃঙ্খলা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। নিয়ম ভাঙার অভ্যাস থেকে ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগবে। সড়কের শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। সড়কের শৃঙ্খলা আনতে হলে সবাইকে সচেতন হয়ে আইন মানতে হবে। পুলিশের কোনো সদস্য ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে একটুও ছাড় দেওয়া হবে না। আমাদের অহংকার করার মতো অতীত রয়েছে। কেন আমরা দেশটাকে পরিবর্তন করতে পারব না। দুর্গাপূজার পরে রোভার স্কাউট, বিএনসিসিসহ অন্যদের নিয়ে ১৫ দিন থেকে মাসব্যাপী ট্রাফিক কর্মসূচি পালন করব।’
প্রধান বক্তার বক্তব্যে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘একটি দেশের উন্নয়নের পরিচয় সে দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে রাস্তায় দিনকে দিন গাড়ি বাড়ছে, বাড়ছে যানজট। এখন সময় এসেছে এগুলো কন্ট্রোল করার। আমাদের সকলকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইন মানতে হবে। শিক্ষার্থীরা তোমরা নিজেরা আইন মানবে পরিবারকেও আইন মানতে বলবে। বিদেশের অনেক দেশে গাড়ির পরিবর্তে সাইকেল ব্যবহার করে। এতে যেমন যানজট হ্রাস পাবে, তেমনি স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। বিদেশের মতো এ দেশেও সাইকেলের জন্য আলাদা লেন থাকা দরকার।’
অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আজকের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ঢাকা শহরের দেড় কোটি জনগণের জন্য ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা অত্যন্ত কম। এই কমসংখ্যক পুলিশ দিয়ে ট্রাফিকের শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব না। আমাদের সবাইকে সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। ট্রাফিক আইন ভাঙার মাধ্যমে সবার মধ্যে আইন ভাঙার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। পুলিশের কাছে অনুরোধ আইন যে–ই ভঙ্গ করবে, তাকে একটুও ছাড় দেবেন না।’
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘পুলিশকে আমরা ভয় পাব কেন? পুলিশ আমাদের বন্ধু। ভয় পাবে তারা, যারা সন্ত্রাসী ও আইন অমান্যকারী। তোমরা শিক্ষার্থীরা যারা নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করেছ, যা নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। তোমরা দেখিয়েছ, কীভাবে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে হয়।’ ডিএমপি কমিশনারকে অনুরোধ করে তিনি বলেন, গাড়িতে অনতিবিলম্বে ফ্লাগ স্ট্যান্ড ব্যবহার বন্ধ করুন।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, ‘ট্রাফিক আইন মানার কোনো বিকল্প নেই। আমরা দীর্ঘদিন ধরে মালিক-শ্রমিকদের সচেতন করতে কাজ করছি। অনেকে সচেতনতার বিষয়টি গভীরভাবে নিচ্ছে না। ফলে দুর্ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটের বড় সমস্যা সড়কে ধীর গতি ও গতিশীল গাড়ি একসঙ্গে চলাচল করে। অন্য গাড়ির মতো রিকশায়ও লুকিং গ্লাস লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।’
খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘ডিএমপি দীর্ঘদিন ধরে ট্রাফিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সড়কের দুর্ঘটনারোধে চালকের পাশাপাশি পথচারীসহ সবাইকে আইন মানতে হবে। সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা পুলিশকে সব সময় সহযোগিতা দিয়ে যাব।’
সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত কমিশনার ট্রাফিক বলেন, ‘ট্রাফিকের শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। ট্রাফিকের শৃঙ্খলা ফেরাতে সবাইকে আইন মানতে হবে। সবাই আইন মানলে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব। দীর্ঘদিনের আইন না মানার অনিয়ম এক দিনে ঠিক হবে না। তবে আমরা আশাবাদী সবাই আইন মানবে।’
ট্রাফিক সচেতনতামূলক সমাবেশে বক্তব্য দেন চিত্রনায়ক ফারুক, জায়েদ খান, রিয়াজ, অভিনেতা আহমেদ শরীফ, নাদের চৌধুরী, ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ, বাংলাদেশ স্কাউটের জাতীয় কমিশনার সরোয়ার মোহাম্মদ শাহরিয়ার, সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ বনমালী ভট্টাচার্য। এ সময় ট্রাফিক সচেতনতামূলক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা, পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতা, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ ডিএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ট্রাফিক সচেতনতামূলক সমাবেশের পরপরই আমন্ত্রিত অতিথি ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি ট্রাফিক সচেতনতামূলক শোভাযাত্রা হয়। শোভাযাত্রা শেষে পরিবহন যাত্রী ও পথচারীদের মাঝে ফুল ও ট্রাফিক সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।