তারেককে ফেরাতে সরকার অনুরোধপত্র পাঠাবে
>
- ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা
- পলাতক ১৮ আসামির অবস্থান নিশ্চিত হতে এবং তাঁদের দেশে ফেরত আনতে তৎপরতা শুরু করছে সরকার।
- যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধপত্র পাঠাবে সরকার
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধপত্র পাঠাবে সরকার। দেশটির সঙ্গে বহিঃসমর্পণ চুক্তি করার বিষয়েও প্রস্তাব পাঠানো হবে। এ ছাড়া এই মামলার সাজাপ্রাপ্ত আরেক আসামি হারিছ চৌধুরীকেও যুক্তরাজ্যে দেখা গেছে বলে সরকারের কাছে খবর রয়েছে। হারিছ চৌধুরী ওই দেশে বসবাস করছেন কি না এবং সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন কি না, যুক্তরাজ্যের কাছে তা-ও জানতে চাওয়া হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপি নেতা তারেক রহমান ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য আদালতের অনুমতি নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান। এরপর থেকে ১০ বছর ধরেই ওই দেশের রাজধানী লন্ডনে থাকছেন। বর্তমানে তিনি ওই দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারেক রহমানের অবস্থান জানা থাকলেও পলাতক সব আসামির তথ্য এখনো সরকারের কাছে নেই। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর পলাতক আসামিদের ফেরত আনতে সরকার নতুন করে উদ্যোগ নিচ্ছে। পলাতক ১৮ জনের সবার অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে।
তারেককে নিয়ে জটিলতা
স্বরাষ্ট্র, আইন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন করে অনুরোধ জানালেও তারেক রহমানকে ফেরানোর ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা আছে। আসামি প্রত্যর্পণ আইন অনুযায়ী কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাঁর দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে অনেক শর্ত মানতে হয় যুক্তরাজ্যকে। এ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় যুক্তরাজ্যের আদালতে।
এর আগে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে একাধিক মামলার পলাতক আসামি হিসেবে তারেক রহমানকে বিচারের জন্য দেশে ফেরত পাঠাতে অনুরোধ জানিয়ে যুক্তরাজ্যের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। কিন্তু যুক্তরাজ্য থেকে তখন সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, তারেক রহমানকে ফেরত আনতে যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা লাগবে। অনেক অনুরোধের পরও বহিঃসমর্পণ চুক্তি করতে এত দিন তারা রাজি হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আবারও তাদের চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানাব চুক্তিটি করতে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের আদালতে এ বিষয়ে আমরা আপিল করব।’
এর আগে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকায় তাঁর বক্তৃতা-বিবৃতি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ নিষিদ্ধ করে হাইকোর্ট ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি আদেশ দেন।
অন্যরা কে কোথায়
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০০৮ সালে দেওয়া প্রথম অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি মাওলানা তাজউদ্দিন। আর্জেস গ্রেনেড সরবরাহকারী হিসেবে তাঁর নাম আসে। জঙ্গি নেতা তাজউদ্দিন গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই। পিন্টুর তিন ভাই এই মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এর মধ্যে পিন্টু ও তাজউদ্দিনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে। আরেক ভাই রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবুর সাজা যাবজ্জীবন। এর মধ্যে পিন্টু কারাগারে, অন্য দুই ভাই পলাতক। দুজনই এখন দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন। সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, ইন্টারপোলের দক্ষিণ আফ্রিকার শাখা কার্যালয় থেকে বাংলাদেশের পুলিশকে জানানো হয়েছে, তাজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, তাজউদ্দিন ও রাতুল আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে আনতে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বহিঃসমর্পণ ও পারস্পরিক আইনি সমঝোতা চুক্তি সই করতে চায় বাংলাদেশ। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই বলে তাজউদ্দিনকে ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না।
এসব আসামির ফেরানোর বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফিরিয়ে আনতে সব উদ্যোগই নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আইনগত সহযোগিতা লাগলে আমরা করব।’
মামলার অভিযোগপত্রে এসেছে যে তাজউদ্দিন ২০০৬ সালে ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কর্মকর্তার সহায়তায় ‘মো. বাদল’ নামে ভুয়া পাসপোর্টে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন ও লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদারের দুই বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। এই দুজনের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে নিশ্চিত তথ্য নেই।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক সাংসদ কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী, কায়কোবাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছেন। এর আগে তাঁকে ফেরাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অসম্পূর্ণ একটি বহিঃসমর্পণ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। যথাসময়ে পৌঁছানো হয়নি বলে সেটা বাতিল হয়ে যায়। অবস্থান নিশ্চিত হলে তাঁকে ফেরাতে সরকার আবার অনুরোধপত্র পাঠাবে।
এই মামলায় হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফের মৃতুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁর অবস্থান সম্পর্কেও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া জমজ ভাই মহিবুল মুত্তাকিন ও আনিসুল মুরছালিন এক দশকের বেশি সময় ধরে ভারতের তিহার জেলে আছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যাদের তথ্য আছে, যারা পলাতক আছে, তাদের সবাইকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে আমরা চিঠি দেব।’ তিনি আরও বলেন, ভারতের কারাগারে যে দুজন আসামি রয়েছেন, তাঁদের আনতে অসুবিধা হবে না। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হস্তান্তর চুক্তি আছে।