নড়বড়ে আ.লীগে প্রত্যাশীর ভিড়
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-২ (সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনে নৌকা প্রতীকের টিকিটপ্রত্যাশী পাঁচজন। তাঁরা সবাই কমবেশি দাবড়ে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। অথচ এ আসনে সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে আওয়ামী লীগের। সাত বছর ধরে সেনবাগে ক্ষমতাসীন দলের কমিটি নেই। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি আছে কাগজে-কলমে।
অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দুজন। আছেন জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থীও। একসময় সেনবাগ উপজেলা নিয়ে ছিল নোয়াখালী-১ আসন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী সোনাইমুড়ীর ৩টি ইউনিয়ন যুক্ত করে এটিকে করা হয় নোয়াখালী-২ আসন।
জয়নুল আবদিন ফারুক ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। বিএনপি আসনটিকে তাদের ঘাঁটি বলে দাবি করে। তবে আওয়ামী লীগের দাবি ভিন্ন।
এই আসনে আওয়ামী লীগে অনৈক্যের পাশাপাশি প্রার্থী বাছাইও একটা বড় সমস্যা। ’৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচটি নির্বাচনে তিনটিতেই সেনবাগের বাইরের প্রার্থীকে দলটি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু বিএনপি বরাবরই সেনবাগ থেকে প্রার্থী দিয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, অনৈক্য দূর করা গেলে জয় নিজেদের পক্ষে নেওয়া খুব কঠিন নয়।
সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক শওকত হোসেন বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের কমিটি না থাকলেও জনসমর্থনের কমতি নেই। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রচার-প্রচারণায় দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের ভোট আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এ অবস্থায় নেত্রী যাকেই নৌকার টিকিট দেবেন, তাঁর পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে আসনটি পাওয়া কঠিন হবে না।
আওয়ামী লীগে প্রার্থীর জট
দলের মনোনয়ন পেতে বর্তমান সাংসদ মোরশেদ আলম ছাড়াও নির্বাচনী মাঠে আছেন চারজন। তাঁরা হলেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন আহমদ, শহীদ তরিক উল্যাহ বীরবিক্রমের ছেলে লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক, জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ব্যবসায়ী আতাউর রহমান ভূঁইয়া ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জাফর আহম্মদ চৌধুরী।
সাংসদ মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদ হওয়ার পর সেনবাগ ও সোনাইমুড়ীতে রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ ভবন ও কালভার্ট নির্মাণসহ অনেক উন্নয়নকাজ করেছেন তিনি। আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী। তাঁর দাবি, দলে বিভক্তি নেই।
জামাল উদ্দিন আহমদ বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে তিনি হেরেছেন। গত ১০ বছর নিয়মিত এলাকায় সময় দিয়েছেন। প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসায় ল্যাপটপ বিতরণ করা ছাড়াও প্রায় প্রতি সপ্তাহে উঠান বৈঠক, মতবিনিময় করেছেন। এবার মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাঁর বাবা মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন। বাবার আত্মত্যাগকে লালন করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। এলাকার নারীশিক্ষার প্রসারে নিজের নামে একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই তাঁর পদচারণা রয়েছে।
আতাউর রহমান ভূঁইয়া ও জাফর আহম্মদ চৌধুরীও এলাকায় নানা ধরনের সামাজিক দায়িত্ব পালনের কথা জানালেন। দুজনই মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
বিএনপির অবস্থা
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুকের নাম দলের প্রার্থী হিসেবে প্রচার থাকলেও এবার দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ব্যবসায়ী কাজী মফিজুর রহমানও মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় বিএনপিতে জয়নুল আবদিন ও কাজী মফিজের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের।
আলাপকালে জয়নুল আবদিন বলেন, টানা পাঁচবার তিনি নোয়াখালী-২ আসনের সাংসদ ছিলেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি যে উন্নয়ন করেছেন, তার সিকি ভাগও গত দশ বছরে আওয়ামী লীগ করতে পারেনি। তা ছাড়া এই আসনের মানুষ ধানের শীষ, খালেদা জিয়া ছাড়া কিছু বোঝে না। অতীতে এর প্রমাণ হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ভবিষ্যতেও প্রমাণিত হবে।
এদিকে সেনবাগে অতীতে খুব কম সময়েই নেতা-কর্মীদের মতামত নিয়ে দলের নেতা নির্বাচন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, সবকিছু হয়েছে একজনের ইচ্ছা-অনিচ্ছায়। নেতা যাঁরা আছেন, তাঁরা জিম্মি। তিনি দাবি করেন, কেন্দ্রের সংকেত পেয়ে তিনি এলাকায় তৎপর হয়েছেন।
তৎপর জাপা ও ইসলামী আন্দোলন
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে এ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে মওদুদ আহমদ প্রথমে প্রধানমন্ত্রী, পরে উপরাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। তাই এ আসনে জাতীয় পার্টিরও জনসমর্থন রয়েছে। আগামী নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে দলের জেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ সভাপতি ও উপজেলা আহ্বায়ক হাসান মঞ্জুর প্রার্থী হতে পারেন বলে জানিয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। তিনি নিয়মিতভাবে এলাকায় গণসংযোগসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক কাজে অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি সেনবাগ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমানকে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।