সংলাপের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকার গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান
‘কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে’ জাতীয় ঐক্য আরও একধাপ এগিয়েছে বলে মনে করছেন নেতারা। জাতীয় ঐক্যের সমাবেশ থেকে ড. কামাল হোসেন, বি. চৌধুরী ও মির্জা ফখরুল এক মঞ্চ থেকে এ অগ্রগতির কথা বলেন।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এই নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের উদ্যোগ নিতে সরকারকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও যুক্তফ্রন্টের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘গণতন্ত্রের সপক্ষের শক্তিদের আমরা আহ্বান করেছি—ঐক্য হোক। আমরা যুক্তফ্রন্ট, কামাল হোসেন, বিএনপিসহ অন্য জাতীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ঐক্য প্রক্রিয়া চলছে। আমি অত্যন্ত আশান্বিত।’ তিনি আরও বলেন, কামাল হোসেন, যুক্তফ্রন্ট ও বিএনপিসহ অন্যান্য দল কেউ সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো অন্যায় সরকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে রায় দেবে না। স্বেচ্ছাচারী ও গণতন্ত্রবিরোধী কোনো সরকারে যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁরা জাতীয় ঐক্য চান।
সমাবেশে বি চৌধুরী বারবারই যুক্তফ্রন্ট ও কামাল হোসেনের স্বাক্ষর করা দফা ও দাবির উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিকে এক হতে হবে। যারা দেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেনি, তারা দেশের মর্ম বুঝবে না। স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির ঐক্য চাই।’ এ ছাড়া সব রাজবন্দীর মুক্তি চান তিনি। কারাবন্দী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে বলেন, প্রত্যেকের অধিকার আছে তিনি কার কাছে চিকিৎসা করাবেন। কিন্তু খালেদার অনুমতি ছাড়াই তাঁর চিকিৎসার বোর্ড গঠন করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বি চৌধুরীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় ঐক্যের এ প্রচেষ্টায় কেউ কেউ ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। আমরা প্রকাশ্যে সভা করছি। গোপন বৈঠক করছি না।’ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না পাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেওয়া হয়নি, নাট্যমঞ্চের বাইরে করতে চাইলে দেওয়া হয়নি। এরপরও আমাদের ঐক্যে জনগণ সাড়া দিয়েছে। কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলছি। সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার সময় এসেছে।’
সমাবেশ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে সমাবেশে উপস্থিত হন দলটির স্থায়ী কমিটির আরও তিন সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ ও আবদুল মঈন খান। প্রধান বক্তা হিসেবে মির্জা ফখরুল বলেন, যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার পাঁচ দফা দাবি ও নয়টি লক্ষ্য এবং বিএনপির ১৫ দফা প্রায় একই। তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন,‘আসুন ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন শুরু করি। কারাবন্দী খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি দিতে ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সরকারকে বাধ্য করব। এই সভার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য একধাপ এগিয়েছে।’ এ ছাড়া তিনি জানান, খালেদা জিয়া কারাগার থেকে খবর পাঠিয়েছেন যেকোনো মূল্যে জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য।
সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। ঘোষণাপত্রে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে সরকারকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বলা হয়, কোটা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সবার মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে। নির্বাচন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার না করার আহ্বান জানানো হয়।
দাবি আদায়ের লক্ষ্যে জেলা, উপজেলায় ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের কমিটি গঠন করা হবে। দাবি আদায় না হাওয়া পর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি চলবে। এ ছাড়া ১ অক্টোবর থেকে নেতারা দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাবেন।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, জাতীয় ঐক্যের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সংবিধান অনুযায়ী সুযোগের সমতা, কল্যাণমুখর অর্থনীতি, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত করা। রাষ্ট্রের আইন ও শাসন বিভাগের সুশাসন প্রতিষ্ঠা।
সমাবেশস্থলে গণফোরামের ব্যানার হাতে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা আসতে থাকেন। ‘জাতীয় ঐক্য জিন্দাবাদ’ স্লোগানও দেন তাঁরা। খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়ার স্লোগান ও তাঁর ছবিসহ প্ল্যাকার্ড হাতে বিএনপির কর্মীরা ঢুকতে থাকেন। সমাবেশে বিএনপির কর্মীদের উপস্থিতিই ছিল চোখে পড়ার মতো।
আজকের সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ ও আবদুল মঈন খান, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মঈনুল হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, ডাকসুর সাবেক নেতা সুলতান মহম্মদ মনসুর, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি । এ ছাড়া সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, ২০ দলের শরিক খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, জাতীয় পার্টি (জাফর), জনতা পার্টি, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল ও দেশরক্ষা আন্দোলনের নেতারা।