১৮ সেপ্টেম্বর মাঠে নামবে ১৪ দল, বৈঠকে সিদ্ধান্ত
১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘জুডিশিয়াল ক্যুতে’ ব্যর্থ হয়ে নির্বাচন প্রতিহত করতে নতুন ষড়যন্ত্রে নেমেছে যুক্তফ্রন্ট। নাসিম এ-ও বলেন, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ দল মাঠে নামবে।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম এ মন্তব্য করেন।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে যে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন আসে, ভোটের মাধ্যমে জনগণের রায় নেওয়ার সময় আসে, তখনই একটি অশুভ মুখচেনা মহল তৎপরতা শুরু করে দেয়। নির্বাচন করা জনগণের অধিকার, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাও একটি রাজনৈতিক দলের অধিকার। জনগণের রায়কে সবাই হাসিমুখে বরণ করে নেবে, এটাই চিরাচরিত নিয়ম।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘২০১৪ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখনো এই অশুভ মহলটি জ্বালাও-পোড়াও করে দেশে একটি অসাংবিধানিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল। আজকে যখন নির্বাচন প্রায় ঘরের দুয়ারে কড়া নাড়ছে, জনগণ যখন উন্মুখ হয়ে আছে তাদের রায় দেওয়ার জন্য, তখন আবার সেই মুখচেনা মহলটি মাঠে নেমে গেছে।’
ইভিএমের বিষয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির যুগে নির্বাচনকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করার সুযোগ নেই। সে ব্যাপারে দেশবাসী যেমন সজাগ, তেমনি সংবাদমাধ্যমও সজাগ।
সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ কয়েকজনের নতুন জোট করা নিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আজকে ফ্রন্ট হচ্ছে, কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু আমরা তো অনেককে চিনি। অত্যন্ত ঘৃণার সঙ্গে বলতে হয়, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে বলতে হয়, যাঁরা কিছুদিন আগেও এখানে জুডিশিয়াল ক্যু করার চেষ্টা করেছিলেন।’
যুক্তফ্রন্টের দাবির বিষয়ে মন্ত্রী নাসিম বলেন, ‘নির্বাচন ঠেকানোর জন্য বলা হচ্ছে, আমাদের এই দাবি মানতে হবে। এই ধরনের অযৌক্তিক দাবি কেউ মানবে না। কোনো অর্থহীন সংলাপের পক্ষে ১৪ দল নয়। সংলাপের মানে হচ্ছে এই নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া, দীর্ঘায়িত করার একটা চক্রান্ত। এই সংলাপের অর্থই হলো দেশে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যে পরিস্থিতির মাধ্যমে দেশে একটা অসাংবিধানিক সরকার যেন প্রতিষ্ঠা করা যায়। এ জন্যই সংলাপের কথা বলা হয়। এর সঙ্গে ১৪ দল একমত নয়, ১৪ দল ছাড় দেওয়ার পক্ষে নয়।’
সংবিধানের বাইরেও নির্বাচন করা যেতে পারে, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে যাঁরা কথা বলেন তাঁদের মনের অভিসন্ধি কী, তা বোঝা যায়। একটি খেলা যখন হবে, খেলার কিছু বিধিবদ্ধ নিয়মকানুন আছে। সেই নিয়ম তো আর কথায় কথায় পরিবর্তন করা যাবে না। খেলায় জিততে হলে যেকোনোভাবে নিয়ম পরিবর্তন করে খেলায় অংশগ্রহণ করতে হবে, এটা হতে পারে না। সুবিধা অনুযায়ী আপনি খেলার নিয়ম পরিবর্তন করতে পারবেন না।’
১৮ সেপ্টেম্বর মাঠে নামবে ১৪ দল
সংসদ নির্বাচন নিয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে চলতি মাসের ১৮ তারিখ থেকে ১৪ দল মাঠে নামবে জানিয়ে জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘এ ধরনের মুখচেনা মহলকে আমরা জানি, এরা চক্রান্ত শুরু করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই ধরনের চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ আছে, থাকবে।’
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘১৮ সেপ্টেম্বর থেকে মাঠে নামবে ১৪ দল। পর্যায়ক্রমে সারা বাংলাদেশে বিভাগীয় সমাবেশ করা হবে। এই সমাবেশ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর আমরা যার যার মতো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ব। আমাদের সামনে একটাই কাজ, ৭১-এর ঘাতক, ৭৫-এর খুনিদের পরাজিত করা। মাঠে-ময়দানে এবং নির্বাচনের মাঠে পরাজিত করা। নির্বাচন ঠেকানোর ক্ষমতা কারও নেই।’
জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাসদের অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।