>
- বৃহত্তর ঐক্য গড়তে প্রস্তাব তৈরি
- আন্দোলনের প্রস্তুতির জন্য মাঠপর্যায়ে বার্তা
- ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে স্বল্প মেয়াদে আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনাও আছে দলটির। এর আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে থাকা দলগুলোকে নিয়ে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি।
দলটির উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, মাঠের আন্দোলন না জমিয়ে সরাসরি নির্বাচনে গিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায় না। এ জন্য ভোটের আগে স্বল্প মেয়াদে আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে চাপে রাখতে চায় বিএনপি। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার ঢাকায় জনসভা করবে বিএনপি। এরপর আরও কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে বড় আন্দোলনের জন্য অক্টোবর মাসকে লক্ষ্যবস্তু ধরে কর্মপরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র বলছে, সরকার যেভাবে খালেদা জিয়ার মামলায় পদে পদে আইনি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে, তাতে শিগগিরই তাঁর কারামুক্তির সম্ভাবনা কমে আসছে। আবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে হতে পারে। এ মামলায় দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমানও আসামি। রাষ্ট্রপক্ষ তারেকসহ ৪১ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে আদালতে। এই মামলার রায়ে তারেক রহমানের বড় ধরনের সাজা হলে এ মাসেই বড় কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি বিএনপির বড় মনোযোগ আন্দোলনের প্রস্তুতির দিকেও।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা নির্বাচনে যাব। বিএনপির চেয়ারপারসনের মুক্তি এবং সবার অংশগ্রহণমূলক একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমাদের আন্দোলনে যেতেই হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।’
বিএনপি এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ সব রাজনৈতিক পক্ষকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা ও তৎপরতা শুরু করেছে। এ জন্য বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা সম্ভাব্য দলগুলোর জন্য একটি প্রস্তাবনা বা ন্যূনতম শর্তের খসড়া তৈরি করেছেন। দলটির নীতিনির্ধারকেরা আশা করছেন, দেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন ও সুশাসনের স্বার্থে বিকল্পধারা, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্যসহ আরও কিছু দল ও জোটের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতা হবে। এরপর তাঁরা একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি আদায়ে আলাদা অবস্থান থেকে যুগপৎ আন্দোলন গড়তে সক্ষম হবেন।
বিএনপির নেতারা বলছেন, ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে যে ধরনের যুগপৎ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধেও তেমন একটা আন্দোলন গড়তে চাইছে বিএনপি। এর প্রস্তুতি চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ঐক্যপ্রক্রিয়া সেভাবে এগোয়নি। তবে এই ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন যে সমাবেশের ডাক দিয়েছেন, সেখান থেকে একটা বৃহত্তর ঐক্যের সূচনা হতে পারে। যদিও এই সমাবেশ হতে দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার কথাও বলছেন অনেকে।
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়ের নেতাদের বার্তা পাঠানো হয়েছে। নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে বিএনপির যেসব জেলা ও উপজেলা কমিটি এখনো হয়নি, সেসব কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে বিএনপির ৮ থেকে ১০টি জেলার কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। এ ছাড়া যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন জেলা ও ইউনিটের কমিটি গঠনের কাজ চলছে। পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকে যার যার এলাকায় কেন্দ্র কমিটি গঠন করতে শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘যিনি নির্বাচন করবেন, তাঁর তো বসে থাকার সুযোগ নেই। নির্বাচন করলে যেমন সম্ভাব্য প্রার্থীকে নিজের মাঠ গুছিয়ে রাখতে হবে, আবার না করলেও তাঁকে প্রতারণার নির্বাচন রুখে দাঁড়ানোর সক্ষমতা তৈরি রাখতে হবে।’
জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির বড় মনোযোগ এখন সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার দিকে। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে স্বল্পমেয়াদি একটা আন্দোলন গড়ে তোলা। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বৃহত্তর ঐক্য ও যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সম্ভাব্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পাঁচ দফার একটা খসড়া তৈরি করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি। সব রাজনৈতিক দলের আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতি বাতিল করা। এসব দাবি নিয়ে বিএনপির নেতারা যুগপৎ আন্দোলনের জন্য সম্ভাব্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
ঐক্য না হলে বিএনপি কী করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা একাই নামব।’