প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া মেজর মাহবুব অন্তত ৫টি বিয়ে করেছেন
অভিনব কায়দায় এক ভুয়া মেজর রাজধানীতে ১৪ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর বাবার করা ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ভুয়া সেই মেজরকে। তাঁর নাম মাহবুব আলম ওরফে রেজা ওরফে আপন চৌধুরী (৪২)। এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত (সিএমএম) আসামিকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। পুলিশ আজ শনিবার ভুয়া মেজরকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে।
ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবার পুরান ঢাকায় বসবাস করে। আর কিশোরীও পুরান ঢাকার একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
কিশোরীর বাবা তাঁর মামলায় দাবি করেছেন, দুই মাস আগে কিশোরীর ১৭ বছর বয়সী সহোদর ভাইয়ের খোঁজে তাঁর বাসায় আসেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পরে কিশোরীর বাবা কোতোয়ালি থানায় যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাঁর ছেলের নামে কোনো মামলা থাকার তথ্য তখন পুলিশ তাঁকে দিতে পারেনি। কিন্তু পুলিশ তাঁর ছেলের খোঁজে আবার তাঁর বাসায় আসে। বাসায় পুলিশ আসার পর বিষয়টি তিনি তাঁর পরিচিত সোহাগ নামের এক ব্যক্তিকে জানান। সোহাগ পরে কিশোরীর বাবাকে বলেন, তাঁর পরিচিত সেনাবাহিনীর একজন অফিসার আছেন। যিনি ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা। তাঁর বর্তমান কর্মস্থল গণভবনে।
পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী কিশোরীর বাবা মামলায় দাবি করেছেন, সোহাগের কাছ থেকে কথিত সেই সেনা অফিসারের নম্বর নেন। পরে তিনি তাঁকে (ভুয়া মেজর মাহবুব) ফোন করেন এবং ছেলের খোঁজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার বিষয়টি জানান। এ ব্যাপারে কথিত সেনা অফিসারের সাহায্য চান বাদী। বাসায়ও আসার দাওয়াত দেন। পরে মাহবুব পুরান ঢাকায় কিশোরীদের বাসায় আসেন। তিনি নিজেকে মেজর বলে পরিচয় দেন। তিনি বাদীর ছেলেকে নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা সমাধান করার আশ্বাসও দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কথিত ওই মেজর কিশোরীর বাবার কাছে দাবি করেন, রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁর পরিচিত। পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ছেলের ঝামেলাটি মিটিয়ে দেবেন। বাদী বলছেন, কিছুদিন যাওয়ার পর মাহবুব একদিন কিশোরীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন বাদীর কাছে। আর বিয়ে না দিলে কিশোরীর ভাইয়ের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে বলে হুমকিও দেন। ভয়ে কিশোরীর বাবা মাহবুবের প্রস্তাবে রাজি হন। মাহবুবকে বাদী বলেন, তাঁর মেয়ের বয়স মাত্র ১৪ বছর। এত কম বয়সে কীভাবে তাঁর বিয়ে হবে? মাহবুব তখন বাদীকে বলেন, বিয়ে নিয়ে কোনো সমস্যা তৈরি হবে না। তবে বিয়ের বিষয়টি কাউকে বলতে নিষেধ করেন তিনি। আর মেয়ের লেখাপড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাদীর মেয়েকে ঘরে তুলে নেবেন না বলেও বাদীকে আশ্বস্ত করেন মাহবুব।
গত এপ্রিলে কিশোরীকে বিয়ে করেন মাহবুব। এরপর বাদীর বাসাতে মেয়ের জামাই হিসেবে বসবাস শুরু করেন। যৌতুক বাবদ মাহবুবকে আট লাখ টাকা দেন বাদী। গত ২০ মে বাদীর কাছে আরও পাঁচ লাখ টাকা চান মাহবুব। তখন বাদীর মনে সন্দেহ হয়, মাহবুব কি আসলেই মেজর? বাদী তখন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মাহবুব ভুয়া মেজর। তিনি একজন প্রতারক।
গতকাল শুক্রবার ভোররাত সোয়া চারটার দিকে কিশোরীকে নিয়ে বাদীর বাসা থেকে পালানোর সময় র্যাব-৩-এর একটি দল মাহবুব ও তাঁর গাড়িচালক খোকনকে গ্রেপ্তার করে। মাহবুবের কাছ থেকে ভুয়া পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও একটি গাড়ি জব্দ করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক জানে আলম মুনশী প্রথম আলোকে বলেন, নিজেকে মেজর পরিচয় দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাকে ধমকান মাহবুব। প্রতারণার মাধ্যমে মাহবুব অন্তত পাঁচটি বিয়ে করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভুয়া পরিচয়ে এভাবে একাধিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত মাহবুব।
জানে আলম মুনশী বলেন, গ্রেপ্তারের পর মাহবুব দাবি করেছেন তিনি সৈনিক পদে চাকরি করেছেন। ২০০৭ সালে তিনি চাকরিচ্যুত হন।
মাহবুবের কিশোরীর বাবার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সোহাগ নামের যে ব্যক্তি, তিনি পলাতক আছেন বলে জানায় পুলিশ।
মাহবুবের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯(১) ধারাসহ দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারার অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলে। কিশোরীর বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ভুয়া মেজর পরিচয় দিয়ে মাহবুব তাঁর মেয়ের জীবন নষ্ট করেছেন। মাহবুবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।