সুফিয়া কামাল হলের ঘটনায় ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি
ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ থেকে এক নেত্রীকে বহিষ্কারের পর এবার তদন্ত কমিটি করেছে ছাত্রলীগ। সংগঠনের নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের জের ধরে তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেখানে কী হয়েছিল, সেটা জানার জন্য এই তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি নুসরাত জাহান ও নিশীতা ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে তদন্ত করছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় গত মঙ্গলবার গভীর রাতে তিন ছাত্রীকে কক্ষে আটকে নির্যাতনের অভিযোগে সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহানকে তাৎক্ষণিকভাবে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন, এক ছাত্রী নিজে লাথি দিয়ে পা কাটার পর তাঁর রগ কেটে দেওয়ার গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিক্ষোভের সৃষ্টি করা হয়েছে। আহত ছাত্রী নিজে বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এর ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে। তিনি নিজেও ছাত্রলীগের নেতা। অথচ ইফফাতকে অবরুদ্ধ করে লাঞ্ছিতও করেছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে বহিষ্কার করতে হয়েছে। এটি তুলে নেওয়ার জন্য সংগঠনেরা নেতা-কর্মীরা দাবি জানাচ্ছেন।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইফফাত শতভাগ নির্দোষ। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও বিষয়টি এসেছে। তাঁর বক্তব্যের ভিডিও দেখার পর কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা প্রকৃত সত্য তুলে ধরুন।’ ইফফাত তিন ছাত্রীকে কক্ষে ডেকে নির্যাতন করছিলেন, এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্লিজ, আপনারা কোনো প্রশ্ন না করে নিরপরাধ মানুষের পাশে দাঁড়ান।’
ওই ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম আলোকে বলেন, ওই রাতে সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির কক্ষে ছাত্রীদের চিৎকার শুনে ছুটে যান উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী মোর্শেদা খানম। তিনি ওই হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তবে, তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে শুরু থেকেই যুক্ত। সভাপতির কক্ষে তিন ছাত্রীকে নির্যাতন করা হচ্ছে দেখে তাঁর সঙ্গে মোর্শেদা বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে মোর্শেদা ওই কক্ষের জানালার কাচে লাথি মারেন। এতে তাঁর পা কেটে যায়।
পরে ছাত্রীরা ইফফাতকে কক্ষে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। কেউ কেউ তাঁর কেটে যাওয়া পায়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। মুহূর্তেই সেটি ছড়িয়ে যায়। কয়েক হাজার ছাত্র হলের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, ইফফাত প্রায়ই ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন চালান। তবে এত দিন ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। প্রশাসন তাঁদের আবাসনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না করায় তাঁরা হলের নেত্রীদের মাধ্যমে ওঠে, তাঁদের কথামতো চলতে বাধ্য হন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মারধরে এই ক্ষোভের বিস্ফোরণ হয়।
ইফফাতকে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি সে সময় অনেক গুজব ছড়িয়েছে। অনেকে বলছে মেয়েটি দরজা বা জানালায় লাথি দিয়ে পা কেটে ফেলেছে। কিন্তু সেটাও হয়তো সে লাঞ্ছিত হয়েছে বলেই। আমরা ছাত্রী লাঞ্ছনার বিষয়টিকে আমলে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একটি সরকারি দলের নেত্রী হওয়া সত্ত্বেও ছাড় দেওয়া হয়নি। এটি নজিরবিহীন। তারপরও হল প্রশাসন তদন্ত করছে। অভিযোগ কতটুকু সত্য, কতটুকু মিথ্যা, তা যাচাই করা হচ্ছে।’