মোটকু রাজার শুটকো বিড়াল
রাজার মনে শান্তি নেই। দিনকে দিন তিনি কেবল মোটা হচ্ছেন।
শুয়ে শান্তি নেই, বসে শান্তি নেই। হাঁটাচলা তো করতেই পারেন না।
এভাবে কি চলে?
দুদিন পরপর রাজার গায়ের জামা টাইট হয়ে যায়। রাজার পোশাক বানাতে বানাতে দরজি ব্যাটা হয়রান।
সারাক্ষণ রাজার খিদে থাকে। নানা পদের রান্না করতে করতে পাচক ব্যাটাও বিরক্ত।
এভাবে কি চলে?
ঘোড়ার পিঠে চড়ে যে একটু বেড়াবেন, তারও জো নেই।
তিনি কাছে গেলেই ঘোড়াগুলো চিত্কার আর লাফালাফি জুড়ে দেয়।
এই মোটা রাজাকে তারা পিঠে নিতে চায় না।
শেষমেশ রাজা একদিন মন্ত্রীকে বলেন, রাজবদ্যিকে ডাকো। দেখি মোটা শরীর কমানোর কোনো সুরাহা করতে পারে কি না!
রাজবদ্যি এসে বললেন, মহারাজ, শুকাতে চাইলে আপনাকে খাওয়া কমাতে হবে।
রাজা রেগে বলেন, এত বড় কথা! রাজা থাকবে না খেয়ে! এই কে আছিস! বদ্যিকে কারাগারে ঢোকা।
পরের দিন নতুন বদ্যি নিয়োগ হলো। তিনি বললেন, মহারাজ, আপনাকে খাটাখাটুনি করে মেদ ঝরাতে হবে।
শুনে রাজা তো রেগে আগুনম ‘কী! এত দাস-দাসী থাকতে আমি কেন খেটে মরব? এই ব্যাটাকেও কয়েদখানায় ভরো।’
এখন তো আরেকজন রাজবদ্যি লাগবে। কিন্তু কেউ আর এই পদে চাকরি করতে চায় না।
রাজা বললেন, ‘অতশত বুঝি না। কালই রাজদরবারে আমি বদ্যি দেখতে চাই।’
পরের দিন পেয়াদারা ধরে নিয়ে এল এক নাপিতকে।
নাপিত বললেন, মহারাজ, আপনাকে একটা হাড় জিরজিরে শুটকো বিড়াল পালতে হবে।
ওকে আপনি আদর-যত্ন করে মোটা করবেন। দাস-দাসী দিয়ে করালে হবে না।
কথা শুনে রাজা অবাক! তবু বললেন, ঠিক আছে, এতেই যদি শরীর শুকায়, মন্দ কী?
রাজ্যের সবচেয়ে শুটকো বিড়ালটা ধরে আনা হলো। দুপুরবেলা রাজা খেতে বসেছেন। অমনি পাত থেকে ভাজা মাছটা ছোঁ মেরে নিয়ে গেল বিড়ালটা। কাণ্ড দেখে রাজা হো হো করে হেসে ওঠেন।
তারপর নিজের খাবারের থালাটা গিয়ে রাখেন বিড়ালের সামনে।
আদর করে বলেন, ‘নে ব্যাটা, তুই-ই খা। আমি নাহয় উপোসই থাকলাম।’
সন্ধ্যাবেলায় বিশাল এক পেয়ালা ভরে রাজার জন্য দুধ আনা হলো। ওমা, বিড়ালটা এক লাফে টেবিলে উঠে চুকচুক করে সেই দুধ খাওয়া শুরু করল। এক দাসী লাঠি নিয়ে বিড়ালটাকে মারতে গেল।
রাজা বললেন, ‘খবরদার! আমার বিড়ালের গায়ে যেন আঁচড়টি না লাগে!’
বিড়াল টেবিলের নিচে গেলে রাজা সিংহাসন ছেড়ে দেখতে যান—ওর কোনো কষ্ট হচ্ছে না তো?
বিড়াল যদি জানালা টপকে বাইরে যায়, রাজাও জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে খবর নেন।
বিড়াল বাগানে ইঁদুর খুঁজতে গেলে রাজাও পিছে পিছে ঘোরেন।
এভাবে রাজার ভালোই খাটাখাটুনি হচ্ছে। শরীরের ওজনও কমছে।
কেটে গেল দুই মাস। একদিন সকালে দরবার শুরু হয়েছে। এমন সময় উঁকি দিল এক নেংটি ইঁদুর।
এই দেখে বিড়াল তো মহাখুশি! সে ছুটল ইঁদুর ধরতে। প্রাণের ভয়ে ইঁদুরও দিল দৌড়।
রাজা হঠাৎ দেখলেন, প্রিয় বিড়াল দৌড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। রাজাও ছুটলেন বিড়ালকে ফিরিয়ে আনতে।
ইঁদুরের পেছনে বিড়াল। বিড়ালের পেছনে রাজা। ছুটছে তো ছুটছেই।
রাজবাড়ি ছাড়িয়ে, বন-বাদাড় পেরিয়ে, মাঠ-ঘাট পেছনে ফেলে তারা দৌড়াচ্ছে।
সকাল পেরিয়ে দুপুর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। বিকেল শেষে সন্ধ্যা ঘনায়। তাদের দৌড় আর থামে না।
রাজ্যের শেষ সীমায় এসে ইঁদুরটা একটা গর্ত দেখে থামল। সুড়ুৎ করে গর্তে ঢুকে প্রাণ বাঁচাল।
বিড়াল এসে গর্তের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল। ইঁদুরটা বের হলেই ধরে খাবে।
রাজাও এলেন খানিক বাদে। প্রিয় বিড়াল পেয়ে তিনি দুই হাতে কোলে তুলে নিলেন।
রাজা ফিরে আসছেন রাজবাড়ির দিকে। বিড়াল তখনো ইঁদুরটার কথা ভাবছে।
সে কোল থেকে নেমে পড়তে চায়। রাজা আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরেন।
সারা রাত রাজা বিড়াল কোলে নিয়ে হাঁটলেন। খাওয়া নেই। বিশ্রাম নেই। ঘুম নেই।
পরদিন সকালবেলা। বিড়াল কোলে নিয়ে রাজা এলেন। তার গায়ের পোশাক ঢিলেঢালা।
রাজাকে দেখে তো সবাই অবাক। ও কী! মহারাজ তো শুকিয়ে গেছেন!